সীতাকুণ্ড উপজেলায় ১৮ হাজার ৫৩০ জন কৃষক চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে এবার আউশ ধানের চারা রোপণ শুরু করেছে। মৌসুমে কিছুটা দেরি হলেও কৃষক পরিবারের সকল সদস্য এখন যার যার ক্ষেতগুলোতে আউশ চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে চলতি মৌসুমে সময় মত বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আউশ রোপণে অনেকটা বিপাকে পড়তে হয়েছে উপজেলার কৃষক পরিবারকে। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার কষ্টের মাঝেও সোনালী ধানের সুগন্ধি আবার তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়।
এবার আউশ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। এ বিষয়ে পৌর সদরের পন্থিছিলা এলাকার কৃষক অজয় বড়ুয়া বলেন, আমরা চৈত্র–বৈশাখে বীজ রোপণের পর জ্যৈষ্ঠের অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকি। প্রকৃতির করুণার এক পশলা বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমার সাথে সাথে চাষ এবং চারা রোপণ শুরু করার কথা থাকলেও কিন্তু এবার সময় মত বৃষ্টি না হওয়ার ফলে আউশের চারা রোপণে প্রায় একমাস পিছিয়ে পড়তে হয়েছে আমাদের। কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে আউশ ধানের বীজ সংগ্রহ করতে পারলেও সময় মত ধানের চারা রোপণ করতে পারিনি আমি। তাই জমিতে কিছু পানি জমার সাথে সাাথে এবার ৪০ শতক জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেছি। অপরদিকে বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ব্লকে দায়িত্বে থাকা উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, উপজেলার অন্যান্য অঞ্চল থেকে টেরিয়াইল ব্লকে আউশ ধানের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। তাই বৃষ্টির কারণে আউশ আবাদে দেরি হলেও শেষ পর্যন্ত ১৮০ হেক্টর জমিতে ৩০০শ’ জন কৃষক হাইব্রীডসহ আউশের বিভিন্ন জাতের ধানের চারা রোপণ করা শুরু করেছেন। এদিকে পৌরসদর এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহ্ আলম বলেন, বারৈয়া পাড়ার তপন চন্দ্রনাথ, শেখপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম, নলুয়া পাড়ার কৃষক মোঃ জাফরসহ অনেকেই আউশ ধানের আবাদ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে প্রদর্শনীর জন্য কৃষকদের বিনামূল্যে আউশ জাতের হাইব্রীড ও উপশী ধান বীজ বিতরণ করা হয়েছিল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পুরো উপজেলা জুড়ে বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে কৃষকরা কোমরে গামছা বেঁধে ক্ষেতে নেমে পড়েছেন আউশ চারা রোপণ করতে। এছাড়া পৌরসভাধীন শেখ পাড়ার কৃষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, পানির অভাবে জমিতে আউশ চাষ করতে পারিনি এতো দিন। এখন একটু জমিতে পানি জমার সাথে সাথে ১২০ শতক জমিতে আউশ রোপণ শুরু করেছি। অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি আউশ রোপণে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির না হওয়ার কারণে জমিতে আউশের চারা রোপণে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। এছাড়া বিভিন্ন কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর চলতি মৌসুমে ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতায় উপকূলীয় এলাকার কৃষক বার বার ক্ষতির শিকার হন। উপজেলার প্রায় কৃষক খুব বৃষ্টি আশা করলেও সৈয়দপুর, মহালঙ্কা, বগাচতর, মহানগর, মুরাদপুর, গুলিয়াখালী, বাঁশবাড়িয়া, বাড়বকুণ্ড, কুমিরা, ভাটেরখীলসহ উপকূলীয় এসব নিম্নাঞ্চলের কৃষক পরিবারগুলো প্রতিবার আউশ রোপণ করে বার বার পথে বসতে হয়েছে তাদের। তাই অধিক বৃষ্টি তারা আশা করছেন না। এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, চলতি মৌসুমে সীতাকুণ্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চল জুড়ে ১৮ হাজার ৫৩০ জন কৃষক পরিবার হাইব্রীড সহ আউশ এর বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ করেছেন।
এর মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ১০০শ’ মেট্রিক টন এবং আবাদের লক্ষ্যমাত্রা শেষ পর্যন্ত অর্জিত হবে ৫ হাজার ৩০ হেক্টর। তিনি বলেন, এখন যত বৃষ্টি হবে কৃষকদের আউশের চারা রোপণে সহজ হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে আগের চেয়ে আরো বেশি ধান উৎপাদন হবে এবার।