সীতাকুণ্ডের হতদরিদ্র জেলে ফকির চাঁন পেলেন মৎস্য সপ্তাহ পদক

প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণ করে আপ্লুত এ জেলে

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২১ আগস্ট, ২০২৫ at ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের একটি গ্রামের নাম কুমিরা কাজিপাড়া। এ গ্রামের বাসিন্দা মৃত হরো বাঁশির ছেলে প্রবীণ মৎস্যজীবী ফকির চাঁন দাশ। সাগর থেকে মাছ শিকার করে চলে তার জীবনজীবিকা। শৈশবে সেই যে বাপের হাত ধরে মাছ ধরায় হাতেখড়ি, এ বার্ধক্যে এসেও তা ধরে রেখেছেন শত কষ্টের মাঝেও। দারিদ্র্য নিত্য সঙ্গী হলেও পেশার প্রতি তার নেই এতটুকু খেদ। একজন আদর্শ মৎস্যজীবী ও মৎস্য খাতে অনন্য অবদানের জন্য ফকির চাঁন দাশ পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও। তিনি অর্জন করেন জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পদক২০২৫।

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে গত সোমবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশচীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি। সীতাকুণ্ডের ইতিহাসে এ প্রথম কোনো জেলে রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত হয়েছেন। সারাদেশের মধ্যে ১৬ জন ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়। তারমধ্য এ পুরস্কারে ভূষিত হন ফকির চাঁন দাশও।

ফকির চাঁন তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আজাদীকে বলেন, আমি প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের হাত থেকে রাষ্ট্রীয় পদক গ্রহণ করেছি। এটা আমার কাছে স্বপ্নের মত, অনেক গর্বের। জীবনভর আমার কাছে এ স্মৃতি অমলিন হয়ে থাকবে।

ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ৫ মেয়ে। কোনো ছেলে নেই। তার মধ্যে বড় তিনজনের বিয়ে হয়ে গেছে। বাকি রয়েছে দুজন। এর মধ্যে চতুর্থ কন্যা কনিকা দাশ কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছে। আর তার ছোটজন পূজা দাশকে এসএসসি পর্যন্ত পড়িয়ে অভাবঅনটনের জন্য আর পড়ালেখা করাতে পারিনি। অনেক কষ্ট করে বড় তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি।

তিনি বলেন, মূলত সাগর থেকে মাছ শিকার করে চলে আমাদের সংসার। আমরা জেলে সম্প্রদায় ইলিশ মৌসুমের জন্য সারাবছর অপেক্ষায় থাকি। এ মৌসুম আসলে জেলে পল্লীতে কমবেশি আনন্দের জোয়ার দেখা যায়। যদিওবা এখন আর আগের সেই দিন নাই। তিনি বলেন, পয়সার অভাবে ঘর বানাতে পারছেন না। তাই ঘরের অবস্থা খুবই করুণ। কোনো রকম প্লাস্টিক ও নষ্ট টিনের সাহায্যে বাঁধা হয়েছে ঘর। অনেকবার পরিকল্পনা করেও ভাল করে ঘর বাঁধা আর হল না। তারপরও আমি রাষ্ট্রীয় পদক গ্রহণ অনেক খুশি। খুশি আমার পরিবারও। এ জন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, ফকির চাঁন একজন আদর্শ মৎস্যজীবী। সবসময় সকল আইন কানুন মেনে চলেন। সরকারও তাকে তার প্রাপ্য স্বীকৃতি দিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ববিদ্যালয় নিছক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি স্বপ্ন বুননের কেন্দ্র
পরবর্তী নিবন্ধকোনো ষড়যন্ত্রই আমাকে দমাতে পারবে না