কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উৎসাহে সীতাকুণ্ড পাহাড়ে প্রথমবারের মতো উচ্চ মূল্যের কাজুবাদাম চাষে সফলতা এসেছে। গাছ লাগানোর এক বছরের মাথায়ই ভালো ফলন মিলেছে। কৃষি বিভাগ জানায়, পার্বত্য অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে অনেক আগে থেকে কাজুবাদাম চাষ হলেও এর আগে সীতাকুণ্ডে কখনও মূল্যবান এ ফলের চাষ হয়নি। সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি এলাকার মাটি কাজুবাদামের জন্য উপযোগী হওয়ায় সেখানে চাষাবাদ চলছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানান, সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ও উত্তর এয়াকুব নগর পাহাড়ি এলাকায় ইন্ডিয়ান জাত এম–২৩ জাতের কাজুবাদামের চাষাবাদ চলছে। ইন্ডিয়ান এম–২৩ জাতের গাছ থেকে এক বছরে তিনবার ফলন পেয়েছেন ভাটিয়ারীর তরুণ কৃষক শাহ ইমন। তিনি বলেন, গত বছর ভাটিয়ারী জাহানারা ব্লকে কৃষক ইমন ৫০ শতাংশ পাহাড়ি জমিতে ৮০টি গাছ লাগান। এক বছরের মাথায় গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার ফুল আসে। প্রতিটি গাছ থেকে তিনি প্রায় এক কেজি করে কাজুবাদাম পেয়েছেন। এরপর আগস্ট–সেপ্টেম্বরে আরও দু’বার ফলন পেয়েছেন। বাগানের ৮০টি গাছ থেকে প্রায় ৯০ কেজি বাদাম পেয়েছেন। তিনি এখন গাছের সংখ্যা আরও বাড়াতে কাজ শুরু করেছেন। প্রথমবার গাছ লাগিয়ে এর পরিচর্যা সঠিকভাবে করতে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণও নেন তিনি।
কৃষি বিভাগ তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। চট্টগ্রামে কাজুবাদামের দুটি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থাকায় ফলন ভালো হলে লাভবান হওয়ার আশা করছেন ইমন। কাজুবাদাম চাষ নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন তিনি। সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ্ বলেন, উচ্চ মূল্যের কাজুবাদাম দেশের নতুন অর্থকরী ফসল। দেশীয় বাজারে কাজুবাদামের অনেক চাহিদা রয়েছে। সে তুলনায় উৎপাদন কম। আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকার কাজুবাদামের চাষ বাড়াচ্ছে। সীতাকুণ্ড পাহাড়ি এলাকা কাজুবাদামের বাণিজ্যিক চাষের উপযোগী। তাই এ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে কাজুবাদাম চাষ শুরু হওয়ায় নগরীর কর্ণফুলী ও পতেঙ্গায় এখন এ ফলটির দুটি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় প্রক্রিয়াজাত হওয়া বাদাম ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। স্থানীয় অভিজাত হোটেল ও রেস্তোরাঁয় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমগাছের তুলনায় কাজুবাদাম গাছের পরিচর্যা অনেক সহজ। তাই সীতাকুণ্ডের বেশ কয়েকজন কৃষক কাজুবাদাম চাষ শুরু করেছেন। গাছ লাগানোর তিন বছর পর থেকেই মূলত বাণিজ্যিকভাবে প্রতিটি গাছ থেকে তিন থেকে পাঁচ কেজি কাজুবাদাম পাওয়া যাবে। প্রথমবারের মতো গাছ লাগিয়েই সফলতা পাচ্ছেন কৃষকরা। তাদের সবরকম সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।