সিপিআর কী–
ভূমিকম্প,জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ‘সিপিআর’ প্রশিক্ষণ খুবই জরুরি। সিপিআর মানে কার্ডিয়োপালমোনারি রিসাশিটেশন। কার্ডিয়ো অর্থ হার্ট, পালমোনারি অর্থ ফুসফুস– এর পুনর্জাগরণ। বা জীবন ফিরিয়ে আনা, যার শ্বাস–প্রশ্বাসও হৃৎসম্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছে, তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা।
শুধু চিকিৎসক বা সেবিকা নন, যে কর্মী গোষ্ঠী ইমারজেন্সি দায়িত্ব পালন করে থাকেন– যেমন, পুলিশ কর্মকর্তা, অগ্নিনির্বাপণ কর্মী, শিক্ষক বা প্রয়োজনে প্যারামেডিকেল, জনগণ, মা–বাবারাও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখতে পারেন।
যে ব্যক্তি সিপিআর দেবেন তাঁকে বলা হয় ‘রেসকিওর’। যার শ্বাস থমকে গেছে, তাকে মুখে মুখে শ্বাস দেবেন–যান্ত্রিক শ্বাস–প্রশ্বাস প্রক্রিয়ার মতো।
কীভাবে করা হয়–
●সাহায্যকারী ব্যক্তি শ্বাস–হৃৎদম্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যক্তির বা শিশুর মুখে মুখ লাগিয়ে জোরে বাতাস ঢোকানোর চেষ্টা করবেন। যেন ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছে যায়। তবে সরাসরি মুখে মুখ না লাগিয়ে বিশেষ মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
● এভাবে দুবার ফুঁ দিতে হবে। এরপর ওই ব্যক্তির বুকের ওপর এক হাতের ওপর অন্য হাতে রেখে দুই হাতের সাহায্যে চাপ দিতে হবে। এতে হার্টের অক্সিজেনযুক্ত রক্ত দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশে প্রবাহিত হবে। এভাবে ৩ বার বুকে চাপ দেওয়ার পর আবারও দুবার মুখে মুখ লাগিয়ে ফুসফুসে বাতাস ভরে দিতে হবে।
●যতক্ষণ পর্যন্ত চিকিৎসক, অক্সিজেন নল, অক্সিজেন ব্যাগ, সিলিন্ডার ও অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এভাবে সিপিআর চালিয়ে যেতে হবে।
কখন সিপিআর লাগতে পারে–
●হার্ট অ্যাটাক হলে
●যখন মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্তসঞ্চালন সাময়িক বন্ধ থাকে (স্ট্রোক)
●কিছু গিলে ফেলার ফলে ফুসফুসে বায়ু চলাচলের পথ অবরুদ্ধ হয়ে গেলে
●পুকুরে বা জলে নিমজ্জন বা শ্বাস–প্রশ্বাস বন্ধ হলে
●ঘাড়ে, মাথায়, পিঠে ইনজুরি বা আঘাত পেলে
●তড়িতাহত হলে (অসাবধানতাবশত বৈদ্যুতিক লাইনে হাত লেগে যাওয়া)
●ইনফেকশনজনিত গুরুতর অসুস্থতা
●মারাত্মক অ্যালার্জি–জনিত প্রতিক্রিয়া।
জরুরি মুহূর্তে প্রথমে অসুস্থ ব্যক্তির কাঁধ ও হাত ধরে সামান্য ঝাঁকুনি সমেত জিজ্ঞেস করা যায়,- ‘ভালো আছেন!’ যদি কোনো উত্তর না আসে এবং আপনার কাছে সিপিআর প্রশিক্ষণের সনদ থাকে, তাহলে সিপিআর শুরু করতে পারেন।
লেখক : প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ,
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।