সিলেটে চারবার ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার পর বড় ভূমিকম্প নিয়ে আবারো জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপাতত এটা নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই, থাকতে হবে সতর্ক। তাদের মতে, সিলেট ভূমিকম্পের অধিক ঝূঁকিপূর্ণ এলাকাভুক্ত বিধায় বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে ছোট ছোট একাধিক ভূমিকম্প হওয়ার কয়েক ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হওয়ায় আপাতত বড় ধরনের কিছু হওয়ার শঙ্কা নেই।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে সিলেট অঞ্চলে। যেগুলো ছোট এবং উৎসস্থল দেশের বাইরে। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশের বাইরে মেঘালয়ের ডাউকির দিকে হয়েছে ভূমিকম্পগুলো। উৎসস্থল দেশের বাইরে। সেটারই কম্পন অনুভব করছে সিলেট। শঙ্কার কিছু নেই। ছোট এবং মৃদু ভূমিকম্প তো, সাধারণত মৃদু ভূমিকম্প বা ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়, বড় ভূমিকম্প হওয়ার আগে আগে। খবর বাংলানিউজের। তিনি বলেন, দুটো বিষয় আছে। একটা হচ্ছে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়ে এনার্জিটা বের হয়ে যায়। আরেকটা হলো যেখানে ভূমিকম্প হয়, সেই জায়গার চরিত্রই হলো এর চেয়ে বড় ভূমিকম্প জেনারেশন করতে পারে না। ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমার ধারণা হলো, যেখানে এই ভূমিকম্পটা হয়েছে এটা ছোট একটা ভূমিকম্প হয়েছে। এরকম ছোট ছোট ভূমিকম্প হলে, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় ভূমিকম্প হয়। কিন্তু হয়নি। সুতরাং এখানে ভয়ের কিছু নেই। এখানে বড় ভূমিকম্প এখনই হচ্ছে না। আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, আমাদের যত দূর জানা, সম্ভবত ১৮৯৭ কিংবা ১৮৯৯ সালের দিকে সিলেট অঞ্চলে একটা বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। যেটার ক্যাটাগরি সম্ভবত রিখটার স্কেল ৭ দশমিক ৯ মাত্রার। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের একটা ধরন হচ্ছে, পিরিয়ডিক্যালি বড় ভূমিকম্প হয়। সেগুলো সাধারণত একশ বছর পরপর ঘুরে আসে। সেই হিসেবে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে যে ভূমিকম্পগুলো হয়েছে, তাতে কিন্তু ওই মাত্রার কম্পন্ন হয়নি।
বাংলাদেশকে তিনটা জোনে ভাগ করা হয়েছে। একটা হলো অধিক ঝূঁকিপূর্ণ, একটা হলো মধ্যম ঝূঁকিপূণ ও আরেকটা হলো কম ঝূঁকিপূর্ণ এলাকা। সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল অধিক ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে পড়েছে। তাই এই দুই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাস নেই এবং ১২০ থেকে ১২২ বছর পূর্বে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল, তাই এর সম্ভাবনা উড়িয়ে যায় না। সুতরাং বড় ভূমিকম্প হতেই পারে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক আরও বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এটা এমন একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশ্বের কারোরই রোধ করার উপায় জানা নেই। তবে আমরা যেটা করতে পারি, সেটা হচ্ছে তাৎক্ষণিক কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারি। এ ক্ষেত্রে ভবনের ভেতরে থাকলে, নিচে থাকলে বাইরে বের হয়ে যেতে হবে। আর উপর তলায় থাকলে শক্ত কোনোকিছুর নিচে মাথায় হাত দিয়ে শোয়ার ভঙ্গিতে অবস্থান নিতে হবে অথবা বিমের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। এসব তাৎক্ষণিক উপায় অবলম্বন ছাড়া কিছু করার নেই। সিলেটের ভুমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মেট্রোলজিস্ট মমিনুল ইসলাম জানান, সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে যে ভূমিকম্প হয়েছে রিখটার স্কেলে সেটা ছিল ৩ দশমিক শূন্য। দ্বিতীয় ঝাঁকুনি ১০টা ৫০ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে হয়েছে, রিখটার স্কেলের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। এছাড়া ১১টা ২৯ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে ২ দশমিক ৮ মাত্রায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আর দুপুর ২টার দিকে যে ভূকম্পন অনুভূত হয়, সেটার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক শূন্য। চারটির উৎপত্তিস্থলই ঢাকা থেকে প্রায় ১৯৬ কিমি উত্তর পূর্বে।
মমিনুল ইসলাম বলেন, ডাউকি ফল্টের কারণে সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। যে কারণে জৈন্তাপুর সীমান্তের দিকেই এর উৎপত্তিস্থল। আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের প্রধান আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে চার দফায় মৃদু ভূমিকম্প হয়েছে। তবে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। গত ২৮ এপ্রিল আসামে রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার এবং ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম, কঙবাজার ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল।