সিরাজ-উদ-দৌলা : বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব

| বুধবার , ২ জুলাই, ২০২৫ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

সিরাজউদদৌলা (১৭৩৩১৭৫৭)। তিনি ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব, যিনি শুধু একটি শাসনব্যবস্থার নয়, বরং একটি স্বাধীন জাতির শেষ প্রতিরোধের প্রতীকও ছিলেন। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে তৎপর, তখন নবাব সিরাজ তাঁদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। এই সংগ্রাম ও পরিণতির মধ্য দিয়েই উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা হয়। সিরাজউদদৌলার জন্ম ১৭৩৩ খ্রিষ্টাব্দে, মুর্শিদাবাদে। তাঁর পিতা জাইনউদদীন আহমদ ছিলেন আলীবর্দী খানের জামাতা। আলীবর্দী খান সিরাজকে নিজের দত্তক পুত্রের মতোই লালনপালন করেন এবং রাজনৈতিকভাবে উত্তরাধিকারী হিসেবে গড়ে তোলেন। শৈশব থেকেই সিরাজের মধ্যে নেতৃত্বগুণ এবং সাহসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। নবাব হিসেবে শাসন ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর সিরাজউদদৌলা বাংলার নবাব পদে অধিষ্ঠিত হন। শাসনভার গ্রহণের পর তিনি দুর্নীতি, অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক ও সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেন। কোম্পানির কলকাতা কেল্লায় সামরিক জোরদারির বিরুদ্ধে তিনি বিক্ষুব্ধ হন এবং ১৭৫৬ সালে কলকাতা আক্রমণ করে ‘ফোর্ট উইলিয়াম’ দখল করেন। এই ঘটনার সূত্রে বিখ্যাত ‘ব্ল্যাক হোল’ ট্র্যাজেডির জন্ম হয়, যা পরবর্তীতে ব্রিটিশরা সিরাজের বিরুদ্ধে প্রচারণার কাজে ব্যবহার করে। সিরাজউদদৌলার শাসনকালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ধারণী ঘটনা হলো ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুনের পলাশীর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভএর নেতৃত্বাধীন ইংরেজ বাহিনী এবং সিরাজের বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নবাবের সেনাপতিরা, বিশেষ করে মীর জাফর, ব্রিটিশদের সঙ্গে গোপনে চুক্তি করে বিশ্বাসঘাতকতা করে। যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারিত হয়ে যায় এই বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে, এবং সিরাজউদদৌলা পরাজিত হন। যুদ্ধের পর সিরাজ মুর্শিদাবাদ থেকে পালিয়ে যান, কিন্তু ধরা পড়ে যান এবং ০২ জুলাই ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তির নয়, বরং বাংলার স্বাধীনতার শেষ সূর্য অস্তমিত হওয়ার ঘটনাও বটে। পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার প্রকৃত ক্ষমতা লাভ করে এবং উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনের ভিত রচিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতুমি থাকলে কাছে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রবাহ