‘সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায়’ বাড়ছে চাল পেঁয়াজ আলুর দাম

| বৃহস্পতিবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২১ at ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ

৭বাজারে চাল, পেঁয়াজ ও আলুর মতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’ এবং তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)। রাষ্ট্রীয় এই গবেষণা সংস্থাটির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উৎপাদন তথ্যের অসামঞ্জস্যও মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। মঙ্গলবার ঢাকার ফার্মগেইটে বিএআরসি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন বিএআরসির গবেষণা দলের সমন্বয়ক ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম। চালের দাম বৃদ্ধির কারণ উপস্থাপন করেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের এসএসও আব্দুস সালাম, আলুর দাম বৃদ্ধির কারণ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক শেখ আব্দুস সবুর, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ উপস্থাপন করেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রধান আব্দুর রশীদ। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময় চাল, পেঁয়াজ ও আলুর বাজারে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ উদ্ঘাটনে বিএআরসি এই গবেষণা চালায়। তাদের প্রতিবেদনে আলাদা করে চাল, পেঁয়াজ ও আলুর দাম বাড়ার কারণ এবং তা ঠেকাতে কিছু সুপারিশ রাখা হয়।
চালের দাম বৃদ্ধির কারণ: প্রায় সকল কৃষকই ধান কর্তনের প্রথম মাসের মধ্যে বাজারজাতযোগ্য উদ্বৃত্তের একটা বড় অংশ বিক্রি করে দেন। কিন্তু গত বোরো মৌসুমে ধান বিক্রির ধরনটি পরিবর্তিত হয়েছে। এ মৌসুমে কৃষকরা তাদের ধান মজুদ থেকে ধীরে ধীরে বিক্রি করেছেন। সরকার কর্তৃক কম চাল সংগ্রহ ও যথাসময়ে আমদানির ব্যর্থতা এবং প্রয়োজনীয় বাজার হস্তক্ষেপের অভাব মূল্য বৃদ্ধির কারণ ছিল।
ধানের বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণ: বড় মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের আধিপত্য ও অসম প্রতিযোগিতা। আমন মৌসুমে ধান উৎপাদনে ঘাটতির আশঙ্কা। ধান চাষের ব্যয় ও প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচ বৃদ্ধি। ক্রমবর্ধমান মৌসুমী ব্যবসায়ী বৃদ্ধি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদন হ্রাস।
আলুর মূল্য বৃদ্ধির কারণ: ভবিষ্যতে মূল্য বৃদ্ধির আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আলুর মজুদ ও হিমাগার থেকে আলুর কম সরবরাহ। হিমাগারে মজুদকৃত আলুর পুনঃপুনঃ হস্তান্তর। পাশের কয়েকটি দেশে আলু রপ্তানি মৌসুমী ব্যবসায়ী কর্তৃক আলুর বিপুল মজুদ ও কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি। আলুর বাজারে সরকারের সীমিত নিয়ন্ত্রণ ও বাজারের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে তথ্যের অভাব। বর্ষার মৌসুমের ব্যাপ্তি দীর্ঘতর হওয়ায় সবজির উৎপাদন হ্রাস ও আলুর চাহিদা বৃদ্ধি।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ: দেশীয় অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেট দ্বারা বাজারে কারসাজি। ভারতীয় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অথবা অতিমাত্রায় ভারতের উপর পেঁয়াজে আমদানির জন্য নির্ভরতা। আমদানির জন্য পেঁয়াজের বিকল্প উৎসের সন্ধানে দ্রুত কার্যক্রমের অভাব। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও মুড়িকাটা পেঁয়াজের সীমিত উৎপাদন।
ধান-চাল নিয়ে সুপারিশ: ধান-চাল সংগ্রহ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরিভাবে ধান সংগ্রহ করা ও মিলারদের মাধ্যমে তা চালে পরিণত করা। চিকন ও মোটা দানার চালের জন্য সরকারের পৃথক ন্যূনতম সহায়তা মূল্য (এসএমপি) ঘোষণা করা। ন্যূনতম ২৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করা এবং মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ সংগ্রহ করার সক্ষমতা অর্জন করা যাতে করে সরকার বাজারে কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে। বাফার স্টক হিসেবে সরকার কর্তৃক প্রতি মাসে কমপক্ষে ১২ দশমিক ৫০ লাখ টন চাল মজুদ নিশ্চিৎ করা। উৎপাদন ব্যয়ের উপর কমপক্ষে ২০ শতাংশ মুনাফা বিবেচনা করে ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোটি ডলারে রকেট গাড়ি
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ৪৭.২৭ কোটি টাকা