চীনের দ্বিতীয় টিকা হিসেবে বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেল সিনোভ্যাক লাইফ সায়েন্সেস কোম্পানির তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা। সিনোভ্যাকের দেশীয় এজেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের ইনসেপ্টা ভ্যাক্সিন ‘করোনা ভ্যাক’ নামের এ টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চেয়েছিল। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেই অনুমোদন দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এ নিয়ে করোনা প্রতিরোধে মোট পাঁচটি টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিল বাংলাদেশ সরকার।
এদিকে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ দ্রুত ৫০ লাখ করোনার টিকা স্পুৎনিক-ভি আমদানি করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগনাতোভের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। আর রাশিয়ার সঙ্গে করোনার টিকা কেনার চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত। এছাড়া সংকটে থাকা বাংলাদেশকে নিজেদের মজুত থেকে করোনার টিকা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার রাজি হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে কবে নাগাদ, কী পরিমাণ টিকা আসবে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। তিনি আরও বলেছেন, টিকা নিয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো ঘাটতি হয়নি। তিনি বলেন, এখানে বাংলাদেশ ও চীন সরকার শুধুই ফ্যাসিলেটেড। টিকা তো সরবরাহ করবে বেসরকারি সংস্থা। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
বাংলাদেশ এর আগে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, রাশিয়ার তৈরি স্পুৎনিক-ভি, চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকার বিবিআইবিপি-সিওরভি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি করা করোনার টিকা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সবুজ সংকেত পায়।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া যাবে। ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ টিকা সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশে অনুমোদন পাওয়া আগের টিকাগুলোর মতোই ‘করোনা ভ্যাক’ নিতে হবে দুই ডোজ করে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে।
চীনের ন্যাশনাল মেডিকেল প্রোডাক্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এনএমপিএ গত ৯ ফেব্রুয়ারি সেদেশে করোনা ভ্যাক ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। গত ১ জুন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি ব্যবহার্য টিকার তালিকায় যুক্ত হয় সিনোভ্যাকের এই টিকা। বর্তমানে বিশ্বের ২২টি দেশ সিনোভ্যাকের তৈরি করোনার টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে। সিনোভ্যাকের টিকা বাংলাদেশে কবে কীভাবে আসবে, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস।
স্পুৎনিক-ভি নিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে : রাশিয়ার সঙ্গে করোনার টিকা স্পুৎনিক-ভি কেনার চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগনাতোভ। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা টিকা সরবরাহে এবং আপনাদের জনগণকে কোভিড মোকাবেলায় সহায়তায় প্রস্তুত। এটা (চুক্তি) প্রায় হয়ে গেছে এবং ভালো মতোই হবে। এটা খুব দ্রুতই হবে।
কবে নাগাদ টিকা পাওয়া যেতে পারে, এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, যৌথ উৎপাদন ও সরবরাহ, দুটো দিকই আছে। এটা জটিল প্রক্রিয়া, তবে কোনো সমস্যা হবে না।
টিকা দিতে রাজি যুক্তরাষ্ট্র : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মোমেন বলেন, ভালো সংবাদ হচ্ছে, আমেরিকা ভ্যাকসিন দেবে আমাদেরকে। সঠিক পরিমাণ এখনও জানি না।
ভারত রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা না তোলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৬ কোটি অতিরিক্ত ডোজ থেকে কিছু টিকা পাঠাতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল বাংলাদেশ। চলমান কূটনৈতিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের তৎপরতায় এই কাজে সফল হওয়ার খবর গতকাল দিলেন মোমেন।
তিনি বলেন, আমরা কোভিডের মধ্যে সাকসেস হওয়ার পরে আরেক ঝামেলা। লোক বেশ কম মরছে বলে তারা আমাদের পাত্তা দেয় না। আমরা বেশ কষ্ট করে পাত্তায় আসছি। সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ না জানালেও ‘খুব শিগগির’ ওই টিকা পাওয়ার আশা প্রকাশ করে মোমেন বলেন, আশা করতেছি খুব শিগগিরই আমাদের তারা ভ্যাকসিন দেবে। কোভ্যাঙ থেকেও পাব। তিনি বলেন, আমাদের তো দরকার অনেক। অন্য দেশের মতো না যে, ২০ হাজার, এক লাখ হলে হয়ে যাবে। আমার ১৬৫ মিলিয়ন লোক, আমার অনেক লাগে। ১৩০ মিলিয়নকে দিলেও ২৬০ মিলিয়ন লাগবে। এটা বিশাল বাজার।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে করোনা মোকাবেলায় চিকিৎসা সরঞ্জামের একটি চালান আজ সোমবার বাংলাদেশে আসবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।