জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় চলমান মেগা প্রকল্পবহির্ভূত ১৪শ কিলোমিটারের বেশি সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ড্রেন ও খাল পরিষ্কার করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন। খালগুলো সিডিএর মেগা প্রকল্পবহির্ভূত হওয়ায় পরিষ্কার করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু এসব কাজে অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য নেই সিটি কর্পোরেশনের। বর্ষার আগে এসব ড্রেন ও খাল থেকে মাটি ও বর্জ্য অপসারণে অন্তত ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। তাই স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছেই টাকাগুলো বরাদ্দ চেয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
এ বিষয়ে গত ২১ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, মেগা প্রকল্পভুক্ত ৩৬টি খালের বাইরে আরো অনেকগুলো খাল রয়েছে। এসব খাল যদি আমরা বার বার পরিষ্কার করতে পারি তাহলে জনগণকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করতে পারব। কিন্তু এ জন্য যে ব্যয় হবে তা খরচের আর্থিক সক্ষমতা কর্পোরেশনের নেই। আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি তখন ৪১১ কোটি টাকার বেশি দেনা ছিল কর্পোরেশনের। থোক বরাদ্দ দিয়ে যে কাজ করব সে সুযোগও নেই। তারপরও কিন্তু আগামী বর্ষায় জনগণকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষায় বসে নেই। খাল খনন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। মহেষখালে কাজ করছি। কৃষিখালও পরিষ্কার করেছি। সামনেও খাল পরিষ্কার কাজ অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ‘সার্কিট হাউজে যে সভা হয়েছে সেখানে আগামী চার মাসের মধ্যে করার জন্য কিছু কর্মপরিকল্পনাও ঠিক করা হয়েছে। তাছাড়া খাল পরিষ্কার রেখে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে অর্থ প্রয়োজন। তাই ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগে লিখেছি। আশা করছি চট্টগ্রামবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রক্ষায় কাঙ্ক্ষিত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে।’ এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে দেওয়া পত্রে বলা হয়, জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে সিডিএ বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতাভুক্ত খালগুলো বাদ দিয়ে বাকি প্রায় ১৪শ কিলোমিটারের অধিক বিভিন্ন সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ড্রেন ও খাল পরিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ড্রেনগুলো থেকে মাটি ও বর্জ্য উত্তোলন করে নিরবচ্ছিন্ন পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হলে আগামী বর্ষায় সম্ভাব্য জলমগ্নতার মাত্রা অনেকটাই কমে আসবে।
আসলে সিটি করপোরেশনের কাজটা কী? এ প্রশ্নের নানা রকম উত্তর আসতে পারে। যেমন, নালা–নর্দমা পরিস্কার, ময়লা–আবর্জনা সরানো আর সড়ক বাতি লাগানো। এর বাইরেও মানুষ সিটি করপোরেশনের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। যেমন বিদ্যুৎ। এটার দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের। পানি সরবরাহের দায়িত্ব ওয়াসার। নগর পরিকল্পনা, নতুন ভবন বা স্থাপনার নকশা অনুমোদন–এসবের দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। টেলিফোন সেবার দায়িত্ব টিএন্ডটির। আরও বিভিন্ন সেবা দেয় আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান। অথচ নগরবাসীর ধারণা এসব কাজের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তাই সকলের উচিত সিটি করপোরেশনকে সহায়তা করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সর্বোপরি নাগরিক সুযোগ–সুবিধা এবং বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠবে।
জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এ কারণেই চট্টগ্রামকে বলা হয় জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। আমদানি–রফতানির ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না।
দেশের উন্নয়নে চট্টগ্রামকে রাখতে হবে সার্বিক স্বার্থে। সঠিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলে চট্টগ্রাম হবে সত্যিকার অর্থে আধুনিক নগরী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, চলমান উন্নয়ন কাজ প্রক্রিয়ায় দেনা থাকাটাই স্বাভাবিক। এর সমাধান হতে হলে সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওনাগুলো যাতে আদায় হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সুনির্দিষ্ট বিধি–বিধান তৈরি করে দিতে হবে। তাছাড়া যত উচ্চপর্যায়েই বৈঠক ও পরামর্শ হোক না কেন, অর্থের সংস্থান না হলে প্রকল্পের কাজ এগোবে না।