করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণা দিন দিন সহিংস হয়ে উঠছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যদিও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা একটা কড়া বার্তা দিতে চাই সহিংসতা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, আমরা কারও নির্বাচনী প্রচারণাকে নিয়ন্ত্রণ করছি না। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত আছে। আমরা সবাইকে বলেছি আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনারা আসেন, আমরা মামলা নিব। আমরা কঠোর অ্যাকশন নিব, এ বিষয়ে কাউকে ছাড় আমরা দিব না। বহিরাগতদের রোধ করার বিষয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, একটি এলাকায় একটি জেলার লোকের আধিক্য থাকতে পারে সেটা একটা বিষয়। আবার বাইরে থেকে অস্ত্রধারীরা এসে নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করতে চায় সেটা আরেকটা বিষয়। অস্ত্রধারীদের বিষয়ে আমাদের কোনো ছাড় নেই। উই আর লুকিং ফর দেম, আমরা দেখছি কারা আসতে পারে। সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে আমরা চেকপোস্ট বসিয়েছি এবং হোটেলগুলোতেও ড্রাইভ দিচ্ছি।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, সহিংসতা, সংঘাত পরিস্থিতিতে প্রার্থীদের একনিষ্ঠ নেতাকর্মী ও ঘনিষ্ঠ স্বজনরা প্রচার-প্রচারণার মাঠে থাকলেও সাধারণ ভোটারদের বেশিরভাগই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচনী সভা-সমাবেশে যোগ দেওয়া দূরে থাক, প্রার্থীরা ভোট চাইতে দুয়ারে গেলেও অনেকে সরে থাকছেন। এমনকি পক্ষপাতিত্বের অজুহাতে প্রতিপক্ষের ক্যাডাররা ভোটারদের ওপর চড়াও হয় কিনা এ ভয়ে ভোট দিতে যাওয়া ঠিক হবে কিনা তা নিয়েও অনেকে সংশয়ে রয়েছেন বলেও খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। আর র্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির কথা নিঃসংকোচে স্বীকার করেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ভোটের মাঠের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে তারা প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উপেক্ষা করেই একপক্ষ অন্যপক্ষের সঙ্গে সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে জানা যাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী মানেই নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা। এই আশঙ্কা এখন সত্যি হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মেয়র পদে একক প্রার্থী বাছাইয়ে সফলতা দেখালেও কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাইয়ে সফল হতে পারেনি। ফলে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এতে যতটা না সমস্যা, তারচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এলাকায় প্রচার চালানোর সময় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। আর তাতেই দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে পরস্পরকে হুমকি-ধমকি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং এক পক্ষ আরেক পক্ষকে বিদ্রুপ করার ঘটনা ঘটছে। অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসার ঘটনাও ঘটছে। আর এতেই দুইপক্ষে সৃষ্টি হচ্ছে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষ সৃষ্টির পরিবেশ।
আসলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস পরিস্থিতি কিংবা সংঘাতের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশ্লিষ্টদের সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রশাসনকে প্রয়োজনে আরো কঠোর হতে হবে, নইলে পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও আক্রমণের সম্মুখীন হতে পারেন। তাই সতর্ক অবস্থান জরুরি। এছাড়া রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনকে ঘিরে সিটি করপোরেশন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণেও সফল হতে পারেনি। ফলে বেশিরভাগ নির্বাচনী এলাকায় ভোটের প্রচার-প্রচারণার উৎসব সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই।
আমরা নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো ধরনের সহিংসতা চাই না। এ ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী উৎসবের আমেজকে ব্যাহত করবে। সহিংসতার ঘটনায় নাগরিকদের মনে চরম উদ্বেগ-আতঙ্ক দেখা দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।