বার্কিং অ্যান্ড ডেগেনহামের মেয়র মঈন কাদরি লন্ডন সফররত কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (সিজেএ) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সেক্রেটারী জেনারেল ও আন্তর্জাতিক কমিটির ইসি মেম্বার, চট্টগ্রাম এডিটরস ক্লাবের উপদেষ্টা ও দি ডেইলি পিপলস ভিউ’র সম্পাদক ও প্রকাশক ওসমান গণি মনসুরকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।
সোমবার (৭ এপ্রিল ২০২৫) কাউন্সিলের মেয়র পার্লারে অনুষ্ঠিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ও সংগঠক ওসমান গণি মনসুরের সৃষ্টিশীল কর্মকান্ড তুলে ধরেন দৈনিক সময় ও মানব টিভি সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক সাঈদ চৌধুরী। তিনি বলেন, একজন সংবেদনশীল ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিক হিসেবে সৃষ্টিমুখর ওসমান গণি মনসুর সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করেন। লেখালেখির পাাপাশি সাংবাদিক সমাজের নেতৃত্ব প্রদানে সক্রিয় রয়েছেন। সিজেএ’র মাধ্যমে সাংবাদিকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধন এবং মুক্তচিন্তা ও মানবিক চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে বহুমুখী কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি, ব্যবসায় ও পেশাদারী পর্যায়ে উচ্চ নৈতিক মূল্যবোধ গঠন এবং বিশ্বব্যাপী ফেলোশীপ প্রদানের মহান ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠিত রোটারী ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চাপ্টারে ওসমান গণি মনসুর দীর্ঘদিন থেকে জড়িত এবং বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন, সাংবাদিক ও কলাম লেখক আজিজুল আম্বিয়া, লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের ইমরান হোসাইন চৌধুরী ও মদরিস আলী, কমিউনিটি নেতা আব্দুল করিম, ইমরানুল গণি প্রমুখ।
কর্মপ্রবল ও প্রেরণাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব ওসমান গণি মনসুরকে বার্কিং অ্যান্ড ডেগেনহাম কাউন্সিলে এসে প্রাণবন্ত একটি বিকেল উপহার দেয়ার জন্য মেয়র মঈন কাদরি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। মানবসেবা, মানবকল্যাণ এবং জনহিতকর কাজকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি যেভাবে দেশে-বিদেশে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সে ক্ষেত্রে আরো সফলতা কামনা করেন মেয়র মঈন।
অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে ওসমান গণি মনসুর বার্কিং অ্যান্ড ডেগেনহামের মেয়র মঈন কাদরির প্রাণখোলা ভালোবাসায় মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেন, লন্ডনে আপনারা রাজনীতি ও কমিউনিটি সেবার মাধ্যমে আমাদের দেশ ও জাতিকে আলোকিত করছেন। উপস্থিত সকলকে মূল্যবান সময় ব্যয় করে তার প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন ওসমান গণি মনসুর।
উল্লেখ্য, ওসমান গণি মনসুরের ‘বৃক্ষবন্দন’ একটি অসাধারণ গ্রন্থ। এ গ্রন্থের প্রকাশকের ভাষায় “বৃক্ষের সঙ্গে মনুষ্য-প্রজাতির সাদৃশ্য এই কারণে যে, উভয়ই প্রাণধারী। কিন্তু বৃক্ষ স্থবির, চলচ্চক্তিহীন। পক্ষান্তরে, মানুষ জঙ্গম, চিরভ্রাম্যমাণ, পরিযায়ী পক্ষীতুল্য। তবুও কোনো কোনো মানুষ বৃক্ষস্বভাবী। তাদের ঠাঁই কোথাও স্থিত থাকে না। ওসমান গনি মনসুর এমন এক চরিত্র, যাকে বলা যায় বৃক্ষমানব। তার শেকড়-বাকড়, মূল-বাকল, শাখা-প্রশাখা মৃত্তিকা-সন্নিবেশিত হলেও, মূলত তিনি একজন বিশ্বপর্যটক। প্রায় সারা দুনিয়া পরিভ্রমণের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ওসমান গনি মনসুর একজন বিশ্ব নাগরিক। …তার জীবনভাষ্য মানে ইতিহাসের অনেক অনালোকিত অধ্যায়ের উন্মোচন। তিনি নিজেই যেন সময়ের সত্যসন্ধ দলিল।”
স্বাধীনতা-পরবর্তী চট্টগ্রামের গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের প্রতিকৃতদের একজন ওসমান গণি মনসুর। যার সূচনা মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ক্ষত প্রভাবিত থিয়েটার অরিন্দম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। …অপরিসীম জীবনতৃষ্ণা, প্রকৃতিপ্রেম, পরিভ্রমানিক প্যাশন-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া বিষয়ের গভীর থেকে গভীরতর অভ্যন্তরে প্রবেশের দুর্লভ ক্ষমতা, অন্তর্দৃষ্টি সর্বোপরি টান্ টান, স্মার্ট ও তীব্র গতিশীল গদ্য তার রচনাকে পৌঁছে দেয় লেখক-পাঠকের সংযোগ মোহনায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রচয়িতার আধুনিক মন-মানস, বিশ্ববীক্ষা এবং ত্রিকালদর্শী প্রাজ্ঞ পুরোহিতের অভীপ্সা।
ওসমান গণি মনসুরের আরেকটি গ্রন্থ ‘অসম্ভবের সাথে লড়াই’। ক্যান্সসার রোগে সন্তান হারানো এই পিতা ক্যান্সসার নিরাময় নিয়ে কাজ করেন আন্তর্জাতিক আঙিনায়। নিজের গ্রন্থে তিনি লেখেন- আমাদের একমাত্র পুত্র সন্তান রাফি এই পৃথিবীর আলো-বাতাসে, হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনা, আদর-স্নেহে চার হাজার চারশ’ চুরানব্বই দিন কাটিয়ে সাজানো সকল স্বপ্নকে তছনছ করে চলে গেছে শেষ গন্তব্যে। রাফি-এ বিশাল পৃথিবীর লক্ষ কোটি মানুষের মধ্যে ছিল একটা ছোট্ট অস্তিত্ব। প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা তার ছোট্ট জীবনে সে উপভোগ করেছে প্রকৃতির শ্যামলিমা, দিগন্ত বিস্তীর্ণ আকাশ-চন্দ্র তারকারাজি। ছোট্ট মনের কৌতূহলে কখনো হয়েছে উচ্ছ্বসিত। কখনো মৌন। অকস্মাৎ ছোট্ট এই ফুটফুটে জীবনে নেমে এলো মরণব্যাধি ‘লিউকেমিয়ার’ আঘাত। সমস্ত পরিবারে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। আমরা বজ্রাহত, হতবাক। অনেক ঘাত প্রতিঘাত প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে চিকিৎসার সম্ভাব্য সর্বোন্নত সুযোগ গ্রহণ করেও পারলাম না রাফির ছোট্ট জীবনকে দীর্ঘায়িত করতে। তার জন্য নির্ধারিত সময়কালটুকুই সে কাটিয়ে গেলো।
রাফির সংক্ষিপ্ত জীবনের কিছু বর্ণময় খন্ডচিত্র আমাদের নাড়া দেয়। হয়ত আপনাদেরও আন্দোলিত করবে। স্মৃতিময় ঘটনাসমূহের মধ্যে তার গুপ্ত জীবনাবেগ আপনারা প্রত্যক্ষ করবেন। তার সম্ভাবনাময় অসম্পূর্ণ জীবনের জন্যে তার কথা ভেবে হয়তো দু’ফোটা অশ্রু ঝরবে। হয়ত অলক্ষ্যে থেকে সে জানবে তার জন্য কেউ দোয়া করছে। এটুকুই হোক কামনা।