আবারও কিশোর গ্যাংয়ের দাপট নগরীতে, আবারও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের হাতে হলো খুন! এবার খুন হলেন সিএনজি টেক্সি চালক বেলাল (৩২)। গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝাউতলা রেলস্টেশন এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় তাকে। তিনি একই এলাকার রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দা। দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে তার। খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রায়হান (১৯) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
খুনের কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে একাধিক কারণ উঠে এসেছে পুলিশ, নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর বক্তব্যে। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেয়ামত উল্লাহ আজাদীকে বলেন, খুনের কারণ সম্পর্কে আমরা প্রাথমিকভাবে জেনেছি, ডাব পাড়া বা গাঁজা খাওয়া নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। আমরা যাচাই করছি। তিনি বলেন, খুনের ঘটনায় শনিবার রাতেই আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করেছিলাম। যাচাই–বাছাই করে চারজনকে ছেড়ে দিয়েছি এবং রায়হান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তার তথ্যমতে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে। জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম ভাঙিয়ে ঝাউতলা নালা পাড়ার কিছু লোক দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতিটি গ্রাম সিএনজি থেকে চাঁদা তুলতো। এই চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রায়শই সেখানকার সিএনজি স্ট্যান্ডের কথিত নেতাকর্মীদের মধ্যে ঝামেলা লেগে থাকতো। সিএনজি স্ট্যান্ডের চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারা থেকে এই খুন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরনের অধীনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরব উপস্থিতি ছিল নিহত বেলালের। সাবেক এই কাউন্সিলর বলছেন ঘটনার সূত্রপাত ডাব পাড়াকে কেন্দ্র করে। তিনি বলেন, শনিবার রাতে ঘটে যাওয়া খুনের ঘটনার পর আমি সকালে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে স্থানীয় অনেকের সাথে কথা বলি। যতটুকু জেনেছি, যেখানে বেলাল খুন হয়েছেন তার বিপরীতে একটি মাদরাসা আছে। আর সেই মাদরাসা থেকে ডাব পাড়াকে কেন্দ্র করেই খুনের ঘটনা ঘটেছে।
তবে নিহত বেলালের স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের দাবি পুরনো শত্রুতার জেরেই খুন করা হয়েছে তার স্বামীকে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে এক মেয়ের স্বামীকে বাঁচাতে যায় আমার স্বামী। তখন স্বামীর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে নালাপাড়ার বাবুল। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটা কল আসে। স্টেশনে একটা বিচার করার জন্য আমার স্বামীকে ডাকে। তিনি গিয়ে মীমাংসা করে দিয়েছেন। কিন্তু তা বাবুলের মন মতো হয়নি। তাই তাকে প্ল্যান করে খুন করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে বেলালকে যারা হত্যা করেছে তারা সবাই স্থানীয় একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য, যেটি পরিচালনা করতো বাবুল। আর বাবুল, মিজান ও বেলাল–এই তিনজনই স্থানীয় ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হিরনের অনুসারী। ঘটনার সূত্রপাত মিজান গ্রুপের আরিফকে নিয়ে। আরিফকে শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাবুলের শালা আকাশ মেরেছে। এরপর মিজান বেলালকে কল দিয়ে বলে, দোস্ত আমার পোলাপানরে মারছে একটু আয়। এরপর মিজান, বাবুল আর বেলাল মিলে একসাথে বসে বিষয়টা সমাধানও করছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে বাবুলের নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা এসে মিজানকে খুঁজে। না পেয়ে বেলালকে জিজ্ঞেস করে, মিজান আমাদের ছেলেদের চড় মারছে কেন? এগুলো বলতে বলতে বেলালকে ধাক্কা দিয়ে অনেক দূর নিয়ে যায়। একটা ঘরের কোণায় বেলালকে ফেলে মুখ চেপে ধরে ছেলেগুলো। বেলালের হাতে একটা বাঁশ ছিলো। সে ওটা দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও তারা ছুরি দিয়ে বেলালকে উপর্যুপুরি আঘাত করে চলে যায়। স্থানীয়রা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় বেলাল।