সিইউএফএল ঠিক করতে ডেনমার্ক থেকে আসছে টিম

গ্যাস সংকটে অনিশ্চয়তা, গ্যাস ছাড়া কাজ করা যাবে না

হাসান আকবর | রবিবার , ৭ মে, ২০২৩ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

সব আয়োজন করেও প্রয়োজনীয় গ্যাসের অভাবে কারখানা চালু করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার সবকিছু গুছিয়ে আনা হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে ডেনমার্ক থেকে বিশেষজ্ঞ টিম আসার সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় গ্যাস না পেলে তারা কাজ করতে পারবে না। এদিকে এলএনজি আমদানির পর চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট থাকবে না বলে আশ্বস্ত করা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

সূত্র জানায়, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার কনভার্টার ক্যাটালিস্ট পরিবর্তন করা হয়। পরিবর্তিত ক্যাটালিস্ট অ্যামোনিয়া উৎপাদন উপযোগী করে তোলার জন্য রিডাকশন করতে ডেনমার্কের হালদার টপসো কোম্পানির বিশেষজ্ঞ টিম আগামী ১০ মে কারখানায় আসার কথা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ টিমের সবকিছু ঠিকভাবে চালু করে দিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) থেকে সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখায় বিশেষজ্ঞ টিমের পক্ষে ক্যাটালিস্ট পরিবর্তনের কাজ সম্পাদন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কনভার্টারের লোডকৃত ক্যাটালিস্ট যথাসময়ে রিডাকশন করা না গেলে ক্যাটালিস্টের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কেজিডিসিএলকে বিষয়টি জানিয়ে জরুরিভাবে সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহের জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। ১০ মে’র মধ্যে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এতে করে বিপুল অর্থ ব্যয়ে কারখানায় যন্ত্রপাতি পুনঃস্থাপন করার সব আয়োজন করা হলেও গ্যাসের অভাবে সবকিছু ভণ্ডুল হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, দৈনিক এক হাজার টন অ্যামোনিয়া ও ১৭শ টন ইউরিয়া উৎপাদনক্ষমতা সম্পন্ন সিইউএফএল কারখানা চালু হয় ১৯৮৭ সালে। বর্তমানে বছরে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে এবং যান্ত্রিক নানা সমস্যা থাকায় বিগত অর্থবছরে কারখানাটিতে প্রায় আড়াই লক্ষ টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়েছে। দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা বছরে প্রায় ২৬ লক্ষ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সিইউএফএলসহ বিসিআইসির অন্যান্য কারখানা প্রায় ১০ লক্ষ টন ইউরিয়া উৎপাদন করে। বাকি ১৬ লক্ষ টন ইউরিয়া আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামস্থ বহুজাতিক সার কারখানা কাফকো থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আন্তর্জাতিক মূল্যে সার আমদানি করতে হয়। কাফকো থেকে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকায় প্রতি টন ইউরিয়া সার সরকারকে কিনতে হয়। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান সিইউএফএলকে গ্যাস সরবরাহ করা হলে প্রতি টন ইউরিয়া সারের দাম পড়বে ২৫ হাজার টাকা। সিইউএফএল চালু থাকলে সরকারের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে সিইউএফএলের পার্শ্ববর্তী কারখানা কাফকোকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সিইউএফএলে মাসের পর মাস গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে।

এ বিষয়ে সিইউএফএল কারখানার একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গ্যাসের অভাবে কারখানাটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। দেশীয় কারখানা হিসেবে এটা যতটুকু গুরুত্ব পাওয়া উচিত ততটুকু পাচ্ছে না।

ডেনমার্ক থেকে টিম আসার কথা রয়েছে জানিয়ে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কারখানায় গ্যাস সরবরাহ দেয়ার জন্য কর্ণফুলী গ্যাসকে অনুরোধ করে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা নিশ্চয় বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবেন।

কেজিডিসিএলের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, আসলে গ্যাস নেই। শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমাদের করার কিছু নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজমুকুট পরে সিংহাসনে বসলেন চার্লস
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস