সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি

চট্টগ্রাম বন্দর

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২ জুন, ২০২১ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

করোনার অভিঘাতে চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছে। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছর শেষ হতে আর এক মাস বাকি। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা দূরে রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে উচ্চ শুল্কের অনেক পণ্য আমদানি কমে গেছে। যদিও চিকিৎসা সরঞ্জামের আয় বেড়েছে, তবে সেই পণ্যের আবার শুল্কহার কম। তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঘাটতিটাও বেড়েছে। চলতি জুন মাসেই শেষ হচ্ছে অর্থবছর। তাই বলা যায়, এ বছরও বড় ঘাটতি নিয়েই শেষ হবে অর্থবছর।
কাস্টমস সূত্র সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে পর্যন্ত) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার ৫০৫ কোটি ১৪ লাখ পিছিয়ে থাকলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। যার প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ১ শতাংশ। তবে এ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বিশাল রাজস্ব ঘাটতির বিষয়ে কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ কিন্তু বাড়ছে। এই অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রা আগের বছরের চেয়ে বেশি ধরা হয়েছে। তবে বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে সারা পৃথিবীতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এই বিশাল রাজস্ব ঘাটতি হতো না।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৪ হাজার ৩০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে হিসেবে জুলাই থেকে মে পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৫৯ হাজার ২৬১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে এই সময়ে আদায় হয়েছে ৪৪ হাজার ৭৫৬ কোটি ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রথম ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ হাজার ৫০৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে। কাস্টমস সূত্রে আরো জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ৮৯৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা, আগস্টে ৫ হাজার ২০৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৩৭৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, অক্টোবরে ৫ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, নভেম্বরে ৫ হাজার ৯৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৩৩৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। এছাড়া জানুয়ারিতে ৫ হাজার ৬০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ৮৫৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, মার্চে ৫ হাজার ৪৬১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, এপ্রিলে ৬ হাজার ২১৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, মে মাসে ৬ হাজার ৯২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং জুনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
কাস্টমসের কর্মকর্তারা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে সারা বিশ্বেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলে দেশিয় শিল্পের কাঁচামাল আমদানি আগের তুলনায় কমে গেছে। এছাড়া উচ্চ শুল্কের অনেক পণ্যের আমদানিও এই সময়ে কমেছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হয়নি। তবে এরমধ্যে আবার বেশ কয়েক মাস গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সামগ্রিক রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হলেও গত অর্থবছরের এই সময়ের তুলনায় এখন পর্যন্ত পজেটিভ গ্রোথই আছে। তবে রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি। গত কয়েক মাস করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ফের বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এতে আমদানিতে আবারও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বলা যায়, এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করার সুযোগ একেবারেই কম। তবে আমরা করোনা মহামারীর মধ্যেও গত অর্থবছরের তুলনায় পজেটিভ গ্রোথ ধরে রেখেছি, এটি সাফল্য বলতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৃষ্টিতে গর্তে ঝুঁকি, কাদায় দুর্ভোগ
পরবর্তী নিবন্ধআসছে ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেট