এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। গতকাল বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১২২তম লেখক হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলেছে, ‘তার মনোমুগ্ধকর এবং দূরদর্শী লেখা যা প্রলয়াতঙ্কের মাঝেও শিল্পের শক্তিকেই প্রতিবিম্বিত করে।’ পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার পাবেন ক্রাসনাহোরকাই। গত বছর এ সম্মাননা পেয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক, কবি হান কাং।
৭১ বছর বয়সি ক্রাসনাহোরকাই পেশায় লেখক এবং চিত্রনাট্যকার। তার লেখা উপন্যাস ‘সাতানতাঙ্গো’ এবং ‘মেলাঙ্কলি অফ রেজিস্ট্যান্স’–কে চলচ্চিত্রে রূপদান করেছেন তার দেশেরই বরেণ্য পরিচালক বেলা তার। চলতি বছরে সাহিত্যে নোবেল পেতে পারেন বলে যাদের নাম বার বার আলোচনায় উঠে এসেছিল, ক্রাসনাহোরকাই তাদের মধ্যে অন্যতম।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের জন্ম ১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির গিউলা শহরে। কৈশোর কাটে হাঙ্গেরির কমিউনিস্ট শাসনের ঘেরাটোপে। আইনের ছাত্র ক্রাসনাহোরকাই স্বাধীন লেখক জীবন বেছে নেন ১৯৮৫ সালে ‘সাতানতাঙ্গো’ উপন্যাসের প্রকাশের সময় থেকেই। তার রচনাকে অনেকেই দুর্বোধ্য তকমা দিলেও ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখালেখি পোস্ট–মডার্ন সাহিত্যকর্মের অন্যতম উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে। প্রথম উপন্যাস থেকেই তার লেখায় উঠে আসতে শুরু করে ভগ্নস্বপ্নের রাজ্য, আশাহত মানুষের কথা। তার উপন্যাসের লিখন–কাঠামো জটিল। কখনও কখনও একটি মাত্র অনুচ্ছেদকে তিনি পাতার পর পাতায় বিস্তৃত করেন কোনও রকম যতিচিহ্ন ছাড়াই। এই বিন্দু থেকেই তার লেখাকে ‘দুরূহ’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা অনেকের মধ্যে লক্ষ করা গেলেও তার পাঠক ও গুণমুগ্ধের সংখ্যাও বিপুল।
১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই দ্বিতীয় হাঙ্গেরিয়ান লেখক, যিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেলেন। এর আগে প্রয়াত ইমরে কের্তেস ২০০২ সালে এই পুরস্কার জিতেছিলেন।
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই দুই ডজনের বেশি বই লিখেছেন। তার প্রথম উপন্যাস সাতানতাঙ্গো ২০১৫ সালের ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ এবং ২০১৩ সালের বেস্ট ট্রান্সলেটেড বুক অ্যাওয়ার্ডসহ (ফিকশন) বহু সাহিত্য পুরস্কার জিতেছে।
বিশ্বের শেষ সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে একটি পোস্টমডার্ন চিত্রকল্প তিনি এঁকেছেন এ উপন্যাসে। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত এই প্রথম উপন্যাসই তাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেয়।