দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, সময় অমূল্য। আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো। যত বাধাই আসুক না কেন, কিছুই অসম্ভব নয়। গতকাল শনিবার নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চাটগাঁ গবেষণা কেন্দ্রের (সিআরসি) উদ্যোগে অধ্যাপক নাজিম উদ্দিনের গ্রন্থ ‘আত্মচরিতে চট্টগ্রামের ইতিহাস’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান এবং ‘অন্বেষা প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ২০২৫’ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সাহস ও ইচ্ছা থাকলে মানুষ অনেক কিছু অর্জন করতে পারে। এর জন্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট। তোমরা যারা শিক্ষার্থী তোমরা মনোবল হারাবে না। সাফল্য আসবেই।
‘আত্মচরিতে চট্টগ্রামের ইতিহাস’ গ্রন্থ বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রন্থটির লেখক কৌতূহল, অনুসন্ধান, ভাবনা থেকে একটা সুন্দর কাজ করে ফেলেছেন। মলাটে তিনি সাদা একটা অবয়ব দিয়েছেন। চাইলে সেখানে তিনি তার ছবি বসাতে পারতেন। কিন্তু সেটি করেননি। উনি চেয়েছেন উনার আত্মচরিত যতই পড়বেন, ভেতরের দিকে যেতে থাকবেন, ততই উনার চরিত্র এবং চট্টগ্রামের ইতিহাস উন্মোচিত হবে।
আজাদী সম্পাদক বলেন, আমরা সবসময় বলি ইম্পসিবল। কিন্তু দেখেন, ইম্পসিবল বলতে আসলে কিছু নেই। সবই সম্ভব। আমাদের শুরুটা করতে হবে। আপনি শেষ করতে না পারলেও অন্যজন শেষ করবে।
অতিথি আলোচকের বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এই গ্রন্থে মৌখিক ঐতিহ্য ও ব্যক্তিগত স্মৃতি অন্তর্ভুক্ত করার ফলে ইতিহাস আরো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ইতিহাস তখনই প্রাণবন্ত হয়, যখন সেটি মানুষের কণ্ঠে ও জীবনে প্রতিফলিত হয়।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে লেখক নাজিম উদ্দিন বলেন, আজকের এই আয়োজন চাটগাঁ গবেষণা কেন্দ্রের জন্য এক বিশেষ মুহূর্ত। এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষার গভীরতর অনুসন্ধান এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে গবেষণা ও চিন্তার অনুশীলনকে উৎসাহিত করা। ইতিহাস কেবল দলিল বা তথ্যের সমষ্টি নয়; এটি মানুষের জীবন, অভিজ্ঞতা, ভাষা ও সংগ্রামের গল্পও। আমি এই বইয়ে চেষ্টা করেছি চট্টগ্রামের ইতিহাসকে ভাষাগত, রাজনৈতিক, জিনগত ও ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে পুনর্গঠিত করতে। বইটি রচনার পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এই বইয়ে আমি ব্যবহার করেছি একটি ত্রিমুখী পদ্ধতি, যেখানে প্রামাণ্য ইতিহাস, মৌখিক ঐতিহ্য ও ব্যক্তিগত স্মৃতিকে একত্র করা হয়েছে; যাতে ইতিহাস কেবল পড়ার বিষয় না হয়ে অভিজ্ঞতার বিষয় হয়ে ওঠে।
চাটগাঁ গবেষণা কেন্দ্রের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের কেন্দ্র শুধু গবেষণা বা প্রকাশনা নিয়ে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা চাই তরুণ প্রজন্ম নিজের মাটি, ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুক, চিন্তা করুক ও প্রশ্ন তুলুক। সেই লক্ষ্যেই আয়োজন করা হয়েছে অন্বেষা প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ২০২৫, যেখানে স্কুল ও কলেজ পর্যায় থেকে ১৭০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। তারা সবাই ‘আত্মচরিতে চট্টগ্রামের ইতিহাস’ বইটি পড়ে নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রবন্ধ লিখেছে। আজকের এই অনুষ্ঠান কেবল একটি বই প্রকাশ নয়, এটি একটি চিন্তার আন্দোলনের সূচনা। চাটগাঁ গবেষণা কেন্দ্র তরুণদের আহ্বান জানাচ্ছে, চিন্তা করো, প্রশ্ন করো, ইতিহাসের সঙ্গে সংলাপ তৈরি করো।
খড়িমাটির প্রকাশক কবি মনিরুল মনির বলেন, বইটি ইতিহাস, জীবন্ত সাক্ষ্য ও জীবনের গল্পের এক আকর্ষণীয় সংমিশ্রণ। একটি অনন্য সৃষ্টি। লেখক নাজিম উদ্দিন চট্টগ্রামের ইতিহাসকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন।
কাটিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ সুললিত কান্তি দে’র সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শিপক কৃষ্ণ দেবনাথ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুস সালাম, থিয়েটার ইনস্টিটিউটের পরিচালক কবি ও নাট্যজন অভীক ওসমান, চট্টগ্রাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ রেজা খান হেলালী এবং শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জাকির হোসেন। অনুষ্ঠান শেষে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।












