দেশের মধ্যে চট্টগ্রামে এক সময় সবচেয়ে সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, উদ্যোগ নিলে সব সম্ভব। আজকে মালেকা খাতুন অনকোলজি ওয়ার্ড যেটা উদ্বোধন হলো, এটি যে কত বড় উদ্যোগ, সেটি আমি বলে বোঝাতে পারব না। এই ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে চট্টগ্রামের মানুষ সেবা পাবেন। চট্টগ্রামের চিকিৎসার প্রসঙ্গে উঠলে সবাই বলে ওখানে কোনো চিকিৎসা নেই। ঢাকায় নিয়ে আসো, থাইল্যান্ডে যাও, না হয় ইন্ডিয়া যাও। এই যে কথাটা আমাদেরকে শুনতে হয়, এর চেয়ে দুঃখের আর বেশি কিছু নেই। গত শনিবার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে দৈনিক আজাদীর অর্থায়নে গড়ে তোলা ‘মালেকা খাতুন অনকোলজি’ ওয়ার্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, আমাদের চট্টগ্রামের মানুষ খুব দয়াবান। আপনি হয়তো কাউকে রিলিফের পণ্য দিলেন, রমজানের সময় শাড়ি দিলেন, এগুলো ব্যক্তিগতভাবে হয়তো ঠিক আছে। মানুষ আপনার সুনাম করতে পারে; কিন্তু এগুলো খুবই ছোটখাটো ব্যাপার। সমাজের যদি সেবা করতে চাই, তাহলে আমাদের ফোকাসটা হতে হবে অনেক বড়। যেটার মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত হবে। বিশেষ করে সমাজের নিম্নআয়ের মানুষের উপকারের বিষয়টা ভাবতে হবে। সেই ভাবনার জায়গা থেকেই মা ও শিশু ক্যান্সার হাসপাতালের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। দৈনিক আজাদী পরিবারের মালেক সাহেব, ভাবী এবং উনার সন্তানেরা মিলে যে এত বড় একটা উদ্যোগ নিয়েছেন, সেই উদ্যোগের ফল আমরা আজকে দেখতে পাচ্ছি।
দেশে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা কত, তা জানা না গেলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা তথ্য অনেকের জানা আছে। ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে দ্য গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরি ক্যানসার বিষয়ে এই তথ্যটি প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, দেশে প্রতিবছর দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আর ক্যানসারে প্রতিবছর মারা যায় ১ লাখ ৮ হাজারের বেশি মানুষ। নিজস্ব কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় জনস্বাস্থ্যবিদেরা এই তথ্যই ব্যবহার করছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ‘দেশের ক্যানসার রোগীর তুলনায় চিকিৎসার আয়োজন অনেক সীমিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার কেন্দ্র বা হাসপাতাল থাকা প্রয়োজন। এসব কেন্দ্রে ক্যানসার শনাক্তসহ ক্যানসার চিকিৎসার তিন ধরনের (কেমোথেরাপি, সার্জারি ও বিকিরণ চিকিৎসা) পদ্ধতি থাকতে হবে। দেশে মানুষ ১৭ কোটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী ১৭০টি ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা দরকার। সরকারি ও বেসরকারি সূত্র বলছে, দেশে ক্যানসার কেন্দ্র আছে ৩৩টি। এর মধ্যে বিকিরণ যন্ত্র আছে ১৯টিতে। ক্যানসার চিকিৎসকদের একটি সংগঠন জানিয়েছে, ক্যানসারের চিকিৎসায় দেশে কমপক্ষে ২২০টি বিকিরণ যন্ত্র দরকার। সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে আছে ৫৭টি যন্ত্র। এর মধ্যে চালু আছে ৪৩টি। বেসরকারি হাসপাতালগুলো এখন বেশি মানুষকে বিকিরণ চিকিৎসা দিচ্ছে।’ বলা যায়, ক্যানসার রোগের চিকিৎসা সেবা অত্যন্ত সীমিত।
চট্টগ্রামে এ ক্যানসার হাসপাতাল চালুর মাধ্যমে অল্প খরচে মিলতে পারে দুরারোগ্য এই ব্যাধির চিকিৎসাসেবা। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রামে নেই কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল। হার্ট, কিডনি, লিভার, বার্ন চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সেবার জন্য রাজধানীতে আলাদা আলাদা হাসপাতাল থাকলেও সরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র অবলম্বন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সকল ধরনের রোগীকে সেখানেই ছুটতে হয়। এতে সীমিত সক্ষমতার হাসপাতালটির ওপর চাপও বেশি। জটিল বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য পৃথক পৃথক বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলা চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। আশা করছি, ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের এ দাবি পূরণে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হবে।
দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক ‘মালেকা খাতুন অনকোলজি’ ওয়ার্ড উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেন, হাসপাতাল শুধু একটি ভবন নয়, এটি আশার প্রতীক। আমাদের লক্ষ্য হলো সাশ্রয়ী, মানবিক ও দক্ষ চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে এই কঠিন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
আমরা প্রত্যাশা করছি, সাশ্রয়ী, মানবিক ও দক্ষ চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হবে।