চট্টগ্রাম থেকে সার উত্তোলন এবং পরিবহন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ডিলাররা। নানাভাবে চেষ্টা করেও সার পরিবহনকালে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে না পারায় ডিলারেরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে করে আজ সকাল থেকে আট জেলার শতাধিক ইউনিয়নে সার পরিবহন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ৬১ লাখ টাকা বাড়তি খরচ করে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার পরও সার পরিবহনকালে চাঁদাবাজি বন্ধ না হওয়ায় গতকাল বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন (বিএফএ) থেকে এই কর্মসূচি এসেছে।
সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামের সিইউএফএল থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, তিন পার্বত্য জেলা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর জেলায় সার সরবরাহ দেয়া হয়। এসব জেলার শতাধিক উপজেলার প্রায় ১২শ’ ইউনিয়নে ১২শ’ ডিলার ইউরিয়া সার কৃষকদের নিকট পৌঁছানোর কার্যক্রম পরিচালনা করে।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণে প্রতি ইউনিয়নে একজন ডিলার এবং ১০ জন সাব ডিলার সার পরিবহন এবং সরবরাহের সাথে জড়িত। চট্টগ্রামের সিইউএফএল এবং কাফকোর সার অন্যান্য স্থানে প্রেরণের পাশাপাশি উক্ত আটটি জেলায়ও সরবরাহ দেয়া হয়। গত কিছুদিন ধরে সিইউএফএল ব্যাগিং গোডাউন থেকে শুধুমাত্র আনোয়ারা এবং বাঁশখালীর ডিলারদের সার সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। বাকি সার সরবরাহ দেয়া হচ্ছে নগরীর কালুরঘাটস্থ বাফার থেকে। গুদাম থেকে ১০ থেকে ১৫ টন সার ট্রাকে বোঝাই করে সংশ্লিষ্ট ডিলারদের কাছে পৌঁছানোর কার্যক্রম চলে। কিন্তু এই সার ট্রাকে বোঝাই করার কার্যক্রমে বছরের পর বছর ধরে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলে আসছে। ট্রাক প্রতি নির্ধারিত হারে চাঁদা নেয়ার এই প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকা আদায় করা হয়। যার যোগান প্রান্তিক চাষীদেরই দিতে হয়।
সার পরিবহনকালে এই চাঁদাবাজি বন্ধ করার লক্ষ্যে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে নতুন টেন্ডারের আওতায় সার ট্রাকে বোঝাইকরণের কার্যক্রম শুরু হয়। চাঁদাবাজির সুযোগ বন্ধ করতে ৬১ লাখ টাকা বাড়তি খরচ করে নিয়োগ করা হয় ঠিকাদার। কিন্তু অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। ট্রাক প্রতি সিইউএফএল গুদামে ৬শ’ টাকা এবং কালুরঘাট বাফারে ২২শ’ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে একশ’ ট্রাকেরও বেশি সার বোঝাই করা হয় এসব গুদাম থেকে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন সিইউএফএলের নেতৃবৃন্দ শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রশাসনের নানা পর্যায়েও দেন–দরবার করেন। প্রতিদিনের চাঁদাবাজি থেকে ডিলারদের রক্ষার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু কোনও কিছুতেই চাঁদাবাজি বন্ধ হয় না। ট্রাক প্রতি নির্ধারিত হারে চাঁদা না দিলে শ্রমিকেরা কাজ করেন না। ঠিকাদার ফোন ধরেন না। গুদামের এই পরিস্থিতিকে ‘অরাজকতা’ বলে জানান ডিলাররা।
গতকাল সকালে ১৪টি ট্রাক কালুরঘাট বাফার গুদামে সার বোঝাই করতে গেলে ২২শ’ টাকা করে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সার বোঝাই বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তী পরিবহন শ্রমিকদের সাথে বাফার গুদামের শ্রমিকদের সংঘর্ষ ঘটে। সেলিম এবং মনির নামের দুইজন পরিবহন শ্রমিককে বেধড়ক মারধর করা হয়। খবর পেয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু শ্রমিকেরা ট্রাকে সার বোঝাই না করে গা ঢাকা দেয়। এতে করে সব আয়োজন সম্পন্ন করেও গতকাল বেশ কয়েকজন ডিলারের হাতে সার পৌঁছায়নি।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল বিকেলে বিএফএ জরুরি বৈঠক করে। বৈঠকে চট্টগ্রামসহ ৮ জেলার শতাধিক ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দকৃত সার উত্তোলন এবং পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আজ সকাল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলেও গতকাল বিএফএ’র সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন।
দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে তিনি জানান, সার পরিবহনে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলে আসছে বহুদিন ধরে। এই চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য এবারকার টেন্ডারে ৬১ লাখ টাকা বাড়তি খরচ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। কথা ছিল আর কোনও চাঁদাবাজি হবে না। কিন্তু গত ১ জুলাই থেকে আমরা নানাভাবে চেষ্টা করেও চাঁদাবাজির কবল থেকে নিস্তার পাচ্ছি না। বহুভাবে দেন দরবার করেছি। কিন্তু কোনও সুফল মিলেনি। আজ (বৃহস্পতিবার) বাফার গুদামে চাঁদার জন্য আমাদের ট্রাকে সার বোঝাই করা হয়নি। পরিবহন শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়েছে। তাই আমরা আর সার উত্তোলন ও পরিবহন করবো না। চট্টগ্রামসহ আট জেলায় আজ থেকে সার পরিবহন ও সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলেও বিএফএ সেক্রেটারি মোহাম্মদ মাহবুব জানান।