সারা দেশ রণক্ষেত্র, নিহত ৯৬

জেলায় জেলায় সংঘাত, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ও ১৯ থানাসহ পুলিশের ২৬ স্থাপনায় হামলা

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৫ আগস্ট, ২০২৪ at ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগের মধ্যে প্রথম দিন গতকাল রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, সংঘর্ষ ও প্রাণহানি হয়েছে। দিনভর সংঘর্ষে ১৪ পুলিশসহ ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ হত্যা করে ফাঁস দিয়ে মরদেহ ঝোলানো হয় গাছে। নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের ৬ জনকে পিটিয়েকুপিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হামলাভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুরান ঢাকায় পোড়ানো হয় পুলিশের গাড়ি। উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে ঢাকাময়মনসিংহ ও ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অসহযোগ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাত সহিংসতার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় সিরাজগঞ্জে। এখানে ১৩ পুলিশসহ ২৭ জনের প্রাণ গেছে। সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সিরাজগঞ্জে দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার রায়গঞ্জ প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভৌমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল হামলার শিকার হয়েছেন আরো অনেক সাংবাদিক। এ সময় গণমাধ্যমের ভবন, গাড়ি ও ক্যামেরা ভাঙচুরেরও অভিযোগ ওঠে।

এদিকে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় সকাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য টিকিট দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৬৭ জনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকের নির্দেশক্রমে তাদের আলাদা ভর্তি ফাইলও তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। খবর বিডিনিউজের।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে হামলা : গতকাল বেলা সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে একদল শ্রমিক লাঠিসোঁটা হাতে শাহবাগে জড়ো হন। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনের দিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এক পর্যায়ে ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএসএমএমইউর ভেতরে চলে যান। পরে আন্দোলনকারীরা বিএসএমএমইউর ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। তখন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করা হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও বাস। পাশাপাশি হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনে ঢিল ছুঁড়ে এবং লাঠি দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।

লাশ নিয়ে শাহবাগ থানায় হামলা, সাউন্ড গ্রেনেডগুলির শব্দে ছত্রভঙ্গ : অসহযোগকে ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে নিহতদের লাশ নিয়ে শহীদ মিনার থেকে মিছিল শেষে রাজধানীর শাহবাগ থানায় আক্রমণের চেষ্টা চালায় আন্দোলনকারীরা। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তিনটি লাশ নিয়ে মিছিল করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায় আন্দোলনকারীরা। লাশ তিনটি তারা শহীদ মিনারে রাখেন কিছুক্ষণ। পরে সোয়া ৬টার দিকে আন্দোলনকারীরা সেগুলো কাঁধে নিয়ে মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে শাহবাগে যান। সেখানে শাহবাগ থানায় আক্রমণের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও বাঁধে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এতে আন্দোলনকারী ছত্রভঙ্গ হয়ে শাহবাগ ত্যাগ করেন।

এর আগে বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আন্দোলনকারীদের শাহবাগ ত্যাগ করতে নির্দেশনা দেন। তবে আন্দোলনকারীদের অনেকে শাহবাগ ছাড়লেও একটি বড় অংশকে শহীদ মিনার, টিএসসির রাজু ভাস্কর্য এলাকায় অবস্থান করতে দেখা যায়। পরে এদের একটি অংশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তিনটি লাশ নিয়ে মিছিল করে। পরে শাহবাগে গিয়ে থানায় হামলার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। সন্ধ্যায় ৭টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান করছিলেন।

রায়গঞ্জে আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা করে ছয় জনকে হত্যা : সিরাজগঞ্জে একটি থানায় হামলা করে পুলিশের ১৩ জন সদস্যকে হত্যার দিন আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয়ে ঢুকে হামলা করে আরও ৬ জনতে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। জেলার রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে একটি মতবিনিময় সভা চলাচালে এই হামলা হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান।

অসহযোগ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাত সহিংসতার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় সিরাজগঞ্জে। জেলার এনায়েতপুর থানায় আক্রমণ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর বের হতে থাকা পুলিশ সদস্যদের অন্তত ১৩ জনকে পিটিয়ে হত্যার কথা নিশ্চিত করেছে পুলিশ সদর সপ্তর থেকে। জেলায় সব মিলিয়ে ২২ জনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। পুলিশ সদস্য ছাড়া বাকি ৯ জনের মধ্যে একজন যুবদল নেতা, একজন সাংবাদিক, ছয় জন আছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।

ইউএনও নাহিদ হাসান খান জানান, সকালে রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা মতবিনিময় সভা করছিলেন। একই সময়ে কার্যালয়ের সামনের মোড়ে বিক্ষোভকারীরা জমায়েত হয়। এক পর্যায়ে এই বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও রায়গঞ্জ প্রেস ক্লাবে হামলা চালায়। তারা পিটিয়ে ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ৪০ থেকে ৫০ জন নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করে। নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসের হামলার ঘটনায় নিহত ৬ জনের মরদেহ কয়েকটি হাসপাতালে রয়েছে। আরও অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে যুবলীগের ৬ জনসহ নিহত ১০ : লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনকারী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। গতকাল দিনভর শহরে বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্যে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী এবং ছয়জন যুবলীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের নামপরিচয় জানা যায়নি।

ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল সাংবাদিকদের বলেন, তিন শিক্ষার্থীর মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। একজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। সে পথে মারা গেছে। এ ছাড়া সংবাদমাধ্যমকর্মীরা শহরের শাখারিপাড়ায় তিন যুবলীগ নেতাকর্মীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন। বাকি তিন যুবলীগ নেতাকর্মীর লাশ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসার সামনে রয়েছে।

আন্দোলনকারীরা লক্ষ্মীপুর২ আসনের সংসদ সদস্য নূর উদ্দিন চৌধুরী নুরু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুন নবী সোহেলের বাসায় অগ্নিসংযোগ করে। সন্ধ্যার পরও তাদের বাড়িঘর জ্বলতে দেখা গেছে।

১৯ থানাসহ পুলিশের ২৬ স্থাপনায় হামলা : দেশের বিভিন্ন এলাকার ১৯টি থানাসহ পুলিশের ২৬টি স্থাপনায় হামলা হয়েছে। থানা ছাড়া অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে চার জেলার এসপি অফিস, ময়মনসিংহে রেঞ্জ ডিআইজির অফিস ও দুটি পুলিশ ফাঁড়ি। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরের এক বার্তায় এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।

এসব হামলার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হামলাটি হয়েছে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায়। সেখানে হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। কুমিল্লায় হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্যসহ গতকালের হামলায় বাহিনীটির ১৪ সদস্য নিহত হয়েছেন। এক দিনেই দেশজুড়ে আহত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্ত রাজধানী ঢাকার দুই থানা হলো যাত্রাবাড়ী ও খিলগাঁও।

সৈয়দ আশরাফের চাচাত ভাইয়ের বাড়িতে আগুন, পুড়ে দুজনের মৃত্যু : কিশোরগঞ্জে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় এক নারীসহ দুটি মরদেহ নেওয়া হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালে। অন্য এক তরুণের মরদেহ নেওয়া হয়েছে সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শহরে সংঘর্ষে প্রাণহানি ছাড়াও আহত হয়েছে আরো শতাধিক। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

খরমপট্টি এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। আশফাক আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচাত ভাই। টিটু গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তিনি সৈয়দ আশরাফের ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলামকে সমর্থন জানিয়ে সরে যান।

নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের ৬ জনকে পিটিয়েকুপিয়ে হত্যা : নরসিংদী শহরে আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুরের দিকে শহরের মাধবদী পৌরসভা সংলগ্ন বড় মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এ কে এম শহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান।

তারা হলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মনির হোসেন ভুঁইয়া, সদর উপজেলার চরদীঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগকর্মী জলিল, সজীব ও মোক্তার।

উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের খালাতো ভাই আল আমিন বলেন, ওই ঘটনায় আমরা খালাত ভাই মারা গেছেন। তাকে পিটিয়ে, কুপিয়ে মারা হয়েছে বলে জেনেছি। সেখানে আরও পাঁচজনের মৃতদেহ আছে।

রংপুরে সংঘর্ষে কাউন্সিলর, যুবলীগ কর্মীসহ তিনজন নিহত : রংপুর নগরীতে তিনজনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা, যুবলীগকর্মী মাসুম মিয়া (৩১) এবং নগরীর গোড়াপীপাড়ার বাসিন্দা খাইরুল (৩০)। গতকাল দুপুর থেকেই মহানগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়, সিটি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। তাদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ তাদের অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে তা আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় যুবলীগকর্মীসহ দুজন নিহতহ হন। পরে তাদের মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হয়।

নারায়ণগঞ্জে ডিসি অফিস এলাকায় সংঘর্ষ, গুলি : নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ছাত্রজনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুড়েছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

দীপু মনির চাঁদপুরের বাড়িতে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর : সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগের মধ্যে চাঁদপুরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনির বাসভবনে হামলা হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার এলাকায় তার বাসভবনের সামনে বিএনপিজামায়াত কর্মীরা জড়ো হয়ে এই হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ঘটনার সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি ঢাকায় ছিলেন। তবে তার স্বজনরা বাড়িতে ছিলেন বলে দলের কর্মীরা জানিয়েছেন।

কুমিল্লায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাসচালক নিহত : কুমিল্লার দেবিদ্বারে পথচারী একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে দেবিদ্বার পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন দেবিদ্বার থানার ওসি নয়ন মিয়া। নিহত আবদুল্লাহ রুবেল (৩৩) উপজেলার বারেরা এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে। তিনি প্রান্তিক নামের একটি পরিবহনের বাসচালক ছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

মাগুরায় পুলিশবিএনপি সংঘর্ষ, ছাত্রদল নেতা ও পথচারীর মৃত্যু : মাগুরা শহরে পুলিশ ও বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষের পর এক ছাত্রদল নেতা ও পথচারীর গুলিবিদ্ধ লাশ নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে শহরের ঢাকা রোডে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী এবং পথচারী ফরহাদ হোসেন।

সিলেটে আন্দোলনকারীপুলিশ সংঘর্ষে নিহত ২ : বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার সদরের ঢাকা দক্ষিণ বাজার এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। তাতে দুজন মারা যান। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুদর্শন সেন বলেন, হাসপাতালে দুজনের মৃতদেহ আনা হয়েছিল।

ফেনীতে সংঘর্ষে নিহত ৫ জন : ফেনীতে ছাত্রজনতার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে। দুপুরের মধ্যে শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ সড়ক ও ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের মহীপাল মোড় এলাকায় সংঘর্ষে এসব নিহতের ঘটনা ঘটে।

পাবনায় গুলিতে নিহত ৩, আহত অর্ধশতাধিক : আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে সংঘর্ষের মধ্যে গুলি খেয়ে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও ৩৪ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।

রংপুরে যুবলীগ কর্মীসহ ৩ জন নিহত : রংপুরে যুবলীগ কর্মীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। দুপুর থেকেই মহানগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়, সিটি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। তাদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ তাদের অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে তা আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় যুবলীগকর্মীসহ তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা, যুবলীগকর্মী মাসুম মিয়া (৩১) ও নগরীর গোড়াপীপাড়ার বাসিন্দা খাইরুল (৩০)

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাশকতাকারীদের কেউ ছাত্র নয় : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধরূপান্তরের রূপরেখা দিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক