বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সমুদ্রে জন্মানো বিভিন্ন প্রজাতির শৈবালের মধ্যে ক্যারাজিনান নামে এক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ হাইড্রোফিলিক কলয়েড (জল–দ্রবণীয় মাড়ি) পাওয়া যায়; যা কাজে লাগিয়ে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের একটি গবেষকদল প্রাথমিকভাবে বায়োডিগ্রেডেবল তথা পচনশীল প্লাস্টিক উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয় মিলনায়তনে পলিথিন দূষণ মোকাবিলায় বিকল্প এবং টেকসই সমাধান বিষয়ক সেমিনারে এ তথ্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা পেপার যুক্তরাষ্ট্রের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, এই গবেষণা কাজে প্রেশারাইজড হট ওয়াটার এঙট্রাকশন (পিএইচডাব্লিউই) পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। প্লাস্টিসাইজার হিসাবে সর্বিটল এবং পলিথিন গ্লাইকলের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছে। উৎপন্ন বায়োফিল্মের কার্যকরী গোষ্ঠীর উপস্থিতি এফটিআইআর বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। বায়োপ্লাস্টিক ফিল্মগুলো ৯০ শতাংশ বায়োডিগ্রেডেবিলিটি এবং ৯৮ শতাংশ জলে দ্রবণীয়তা দেখায়। পাশাপাশি বায়োপ্লাস্টিক ফিল্মগুলোর শক্তি এবং প্রসারণের পরীক্ষাও করা হয়। এসে আশানুরূপ ফলাফল মিলেছে। ফলাফলগুলো ইঙ্গিত করে, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া সামুদ্রিক শৈবাল বিশেষত লাল প্রজাতির শৈবাল খাদ্য প্যাকেজিং, ওষুধ শিল্প ও একক ব্যবহৃত গৃহস্থালি প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প তথা পচনশীল প্লাস্টিক তৈরির একটি সম্ভাব্য উপাদান হতে পারে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। চট্টগ্রাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সোসাইটি আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান ইনিস্টিউটের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চবি শিক্ষক ড. জহিরুল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি প্রমুখ।
প্রফেসর ড. চৌধুরী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান বলেন, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বায়োপ্লাস্টিকের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। কারণ এটি প্রচলিত পেট্রোলিয়ামভিত্তিক প্লাস্টিকের একটি টেকসই বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। বায়োপ্লাস্টিক প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ার কারণে এটি দূষণ হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রচুর পরিমাণ প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে, যা পরবর্তীতে মাটি, জলাশয় এবং মহাসাগরে জমা হয়। পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে। প্লাস্টিক তৈরিতে পেট্রোলিয়াম পণ্য ব্যবহার করার সময় প্রচুর গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের একটি প্রধান কারণ। বায়োপ্লাস্টিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস করা যায়। কারণ এটি প্রাকৃতিকভাবে ভেঙে যায়, পরিবেশে ক্ষতি করে না এবং প্রচলিত প্লাস্টিকের তুলনায় কম কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয়।