কক্সবাজারে বেসরকারি হ্যাচারি ‘গ্রিন হাউজ মেরিকালচার’ সামুদ্রিক কোরাল মাছের কৃত্রিম প্রজনন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তারাই এই প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে দৈনিক আজাদীকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গ্রিন হাউজ মেরিকালচার হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী তারিকুল ইসলাম চৌধুরী। এর আগে গত ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় ওই হ্যাচারির স্পনিং ট্যাংকে একটি মা কোরাল প্রায় ১০ লাখ ডিম ছাড়ে এবং সেখান থেকে প্রায় ছয় লাখ রেণু পোনা জন্ম নেয়।
তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হ্যাচারিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পরামর্শদাতাদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রথমবারের মতো সামুদ্রিক কোরাল মাছের কৃত্রিম প্রজনন সফলভাবে সম্পন্ন করে গ্রিন হাউজ মেরিকালচার হ্যাচারি। বর্তমানে হ্যাচারিতে রেণু পোনার প্রতিপালন করা হচ্ছে। রেণু বড় হলে ক্রমান্বয়ে সেগুলো নার্সারি পুকুরে ও চাষাবাদ পুকুরে চাষ করা হবে। এই মাছ সমুদ্রের লোনা পানির খাঁচা, উপকূলের স্বল্প লোনা পানির পুকুর ও মিঠা পানির পুকুরে চাষ করা যাবে। তিনি জানান, গ্রিন হাউজ মেরিকালচারের এই উদ্যোগটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘টেকসই উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক মৎস্য প্রকল্প’ থেকে আংশিক গবেষণা সহায়তা প্রাপ্ত। এই হ্যাচারি ভবিষ্যতে সরকারের অথবা উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা পেলে কোরাল মাছের কৃত্রিম প্রজনন ছাড়াও নার্সারি ব্যবস্থাপনা, মেরিকালচার ব্যবস্থাপনা, এবং চাষকালীন বিভিন্ন স্তরের মানসম্পন্ন খাদ্য প্রস্তুত করবে। এছাড়া নানা ধরনের কারিগরি বিষয়ে প্রান্তিক চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানে আগ্রহী হবে বলে জানান তারিকুল।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান আজাদীকে বলেন, ২০১৮ সালে সোনাদিয়া দ্বীপে গিয়ে প্রাকৃতিক নিয়মে আমরা পুরুষ কোরাল থেকে বাচ্চা প্রজননের ব্যবস্থা করেছিলাম। কৃত্রিম উপায়ে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রজনন করেছে কিনা তা মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে রেকর্ড নেই। তবে ১৮ নভেম্বরের পরে এক সপ্তাহের মধ্যে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সামুদ্রিক কোরাল থেকে কৃত্রিম প্রজননের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এ নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা চলছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা আজাদীকে বলেন, সামুদ্রিক কোরাল মাছ থেকে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা প্রজনন একটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। এতে করে কোরালের চাহিদার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হবে। যারা এই কাজগুলো করে যাচ্ছে তারা নিশ্চয় প্রশংসার দাবি রাখে। প্রজনন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হ্যাচারিগুলোকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহায়তা করলে তারা আরও অগ্রসর হবে বলে মনে করি।