চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশকে ভারত জয়ের লক্ষ্য দিয়েছে ৫১৫ রানের। বিশাল এই লক্ষ্য তাড়া করা আদৌ সম্ভব কিনা সময়ই বলে দেবে। জিততে হলে রীতিমত বিশ্ব রেকর্ড গড়তে হবে টাইগারদের। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৪১৮ রানের বেশি তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড নেই। নাজমুল হোসেন শান্তর দল যেখানে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ১৪৯ রানে, সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে করতে হচ্ছে ৫১৫ রান। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানেই হারিয়েছে ৪ উইকেট। আলো স্বল্পতার কারণে আগেভাগেই তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হয়। চেন্নাইতে তৃতীয় দিন শেষে উইকেটে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং সাকিব আল হাসান। শান্ত ৫১ রান নিয়ে ও সাকিব ব্যাট করছিলেন ৫ রান নিয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের রান ছিল ৪ উইকেটে ১৫৮। এখনও জিততে হলে প্রয়োজন ৩৫৭ রান। হাতে উইকেট আছে আর ৬টি। বাংলাদেশ কি পারবে? চতুর্থদিন সকালে ভারতীয় বোলার জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ এবং আকাশদ্বীপদের বোলিং তোড় কতটা সামলাতে পারে টাইগাররা– সেটাই দেখার বিষয়। সাকিব–শান্ত জুটির ওপরই নির্ভর করবে আসলে বাংলাদেশ কতদূর যেতে পারবে।
৫১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দারুণ সূচনা করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম এবং জাকির হাসান। ৬২ রানের জুটি গড়ার পর বিচ্ছিন্ন হন তারা দু’জন। ১৭তম ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে তৃতীয় স্লিপে জশস্বী জয়সওয়ালের হাতে ক্যাচ হয়ে ফিরে যান জাকির। ৪৭ বলে ৩৩ রান করেন বাংলাদেশি এই ওপেনার। পিচে সেট হয়ে আউট হন ওপেনার জাকির হাসান। তার দেখানো পথে হাঁটেন আরেক ওপেনার সাদমান ইসলামও। ৬৮ বলে ৩৫ রান করে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে শর্ট মিডউইকেটে শুভমান গিলের হাতে ক্যাচ হন তিনি। দলীয় ৮৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনারের বিদায়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা ভরসা করেছিলেন মোমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিমের উপর। অভিজ্ঞ এই দুই ব্যাটারও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। দুজনই মারমুখী হতে গিয়ে দ্রুতই বিদায় নেন। মোমিনুল–মুশফিক দুজনই ফিরেছেন ১৩ রান করে। আবার দুজনই হয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শিকার। দলীয় ১২৪ রানে অশ্বিনের বলে বোল্ড হন মোমিনুল। এরপর স্কোরকার্ডে আর ২২ রান যোগ হতেই আউট হন মুশফিক। আগের বলে ছক্কা হাঁকানো এই ডানহাতি ব্যাটার পরের বলে মিডঅনে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দেন। এর আগে গতকাল শনিবার ৩ উইকেটে ৮১ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে ভারত। শুরুতে কিছুটা ধীরগতিতে রান তুললেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন আগের দিনে অপরাজিত ব্যাটার গিল ও রিশাভ পান্ত। মারকুটে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কিছু ভুল শটও খেলেছিলেন তারা। তাদের সেই ভুল লুফে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ক্যাচ মিস করেন ফিল্ডাররা। তাসকিন আহমেদের করা ৩৫তম ওভারে গিলের ক্যাচ ফেলে দেন তাইজুল ইসলাম। এরপর ৪৯তম ওভারে সাকিব আল হাসানের বলে মিড–উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারেন পান্ত। আকাশে ভাসতে থাকা বল তালুতে জমা করতে পর্যাপ্ত সময় পেলেও ব্যর্থ হন শান্ত। জীবন পেয়ে পান্ত ও গিল দুইজনই সেঞ্চুরি হাঁকান। চতুর্থ উইকেটে ১৬৭ রানের বিশাল জুটি করেন পান্ত–গিল। অবশেষে ভারতের এই জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তৃতীয় দিনে এটিই বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটের একমাত্র প্রাপ্তি। সেঞ্চুরি হাঁকানো রিশাভ পান্তকে নিজের হাতের ক্যাচ বানান ডানহাতি টাইগার স্পিনার। ১২৮ বলে ১০৯ রান করেন ভারতীয় উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ১৩ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা হাঁকান পান্ত।
৪ উইকেটে ২৮৭ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। এতে স্বাগতিকদের লিড হয়ে যায় ৫১৪ রানের। রোহিত শর্মার ইনিংস ঘোষণার সময় ক্রিজে ছিলেন শুভমান গিল ও লোকেশ রাহুল। গিল ১১৯ রানে ও রাহুল খেলছিলেন ২২ রান নিয়ে।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ৩৭৬ রান করে ভারত। জবাবে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় মাত্র ১৪৯ রানে। বাংলাদেশকে ফলোঅন করানোর সুযোগ থাকলেও তা করেনি ভারত।