সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ইন্তেকাল

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শোক

| রবিবার , ৬ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন। গত শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে নিজ প্রতিষ্ঠিত রাজধানীর মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহিরাজিউন)। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাতে বাসস জানিয়েছে, এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ক্ষতি হলো তা অপূরণীয়। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা তার শোকবার্তায় বলেন, জাতি একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদকে হারালো। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানজান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

হাসপাতালে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার ছেলে মাহী বি চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা রাত ৩টা ১২ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে মাহী বি চৌধুরী জানান, শনিবার সকাল ৮টায় মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম জানাজা ও বাদ জোহর বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনের বাইতুল আতিক সেন্ট্রাল জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (আজ) সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়ামে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাদ জোহর গ্রামের বাড়িতে (দয়হাটা, মজিদপুর, মুন্সীগঞ্জ) চতুর্থ জানাজা শেষে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

মৃত্যুকালে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির বয়স হয়েছিলো ৯৪ বছর। তিনি স্ত্রী হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী ব্যারিস্টার, ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী চিকিৎসক এবং উত্তরা উইমেন মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন। ছেলে মাহী বি চৌধুরী রাজনীতিবিদ, যিনি বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব। মুন্সীগঞ্জ১ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

গত বুধবার ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে রাজধানীর উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে নানা বাড়িতে (প্রখ্যাত ‘মুন্সেফ বাড়ি’) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহসভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৪৭ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করার পর ১৯৫৪৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি লন্ডনের রয়াল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস, এডিনবার্গ ও গ্লাসগো থেকে এফআরসিপি এবং এসসিপিএস লাভ করেন। ঢাকায় মেডিসিন বিভাগের খ্যাতিমান চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘদিন মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তিনি। বি চৌধুরী বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘আপনার ডাক্তার’ নামের একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খ্যাতিমান এই চিকিৎসককে রাজনীতিতে যুক্ত করতে ১৯৭৮ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী দলবিএনপির প্রথম মহাসচিব করেন। বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। জিয়াউর রহমানের সরকারে তিনি উপ প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকারে শিক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। পরে বি চৌধুরী বিএনপি ছেড়ে ২০০৪ সালের ৮ মে ‘বিকল্পধারা বাংলাদেশ’ নামের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আমৃত্যু দলটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজ্বালানি তেল সংশ্লিষ্ট ২৭ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপির দাবি নির্বাচনী রোডম্যাপ