ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) থেকে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ ৩১ জনকে আসামি করে গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা হয়; বাদী হয়েছেন কমিশনের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান খান। এদিন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের মামলার বিষয়টি জানান। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের এক কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ‘ভিশন ট্রেডিং’ নামে একটি কাগুজে কোম্পানি তৈরি করা হয়। এ কোম্পানির নামে ইউসিবির চট্টগ্রাম পোর্ট শাখা থেকে কোনো ধরনের যাচাই–বাছাই ছাড়াই অনুমোদন দেওয়া হয় ২৫ কোটি টাকার ঋণ।
দুদক বলছে, ব্যাংকের ওই শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. একরাম উল্লাহ এবং শাখাপ্রধান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ চৌধুরী যাচাই ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটির নামে হিসাব খুলে দেন। পরে ঋণের আবেদন প্রক্রিয়ায় মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে শাখার ক্রেডিট কমিটি সুপারিশ করে, যা ব্যাংকের করপোরেট অফিসে পাঠানো হয়। যদিও প্রস্তাবের সঙ্গে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ যুক্ত করে তা পরিচালনা পর্ষদের কাছে উপস্থাপন করা হয়, এরপরও ইউসিবির ৪৪৮তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় ঋণটি অনুমোদন পায়।
অনুসন্ধানের ভিত্তিতে দুদক বলছে, ভিশন ট্রেডিং নামে বাস্তবে কোনো প্রতিষ্ঠানই ছিল না। এই প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া অর্থ পরে আলফা ট্রেডিং, ক্লাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামের আরও কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।
এসব প্রতিষ্ঠান ছিল আরামিট গ্রুপের কর্মচারীদের নামে খোলা। এভাবে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন– সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার স্ত্রী ও ইউসিবি পিএলসির সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান, ভিশন ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও আরামিট পিএলসির প্রটোকল অফিসার মোহাম্মদ ফরমান উল্লাহ চৌধুরী, ইউসিবি পিএলসির পোর্ট শাখার সাবেক সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ, সাবেক শাখাপ্রধান ও ভিপি আবদুল হামিদ চৌধুরী, সাবেক ক্রেডিট অফিসার জিয়াউল করিম খান, সাবেক এফএভিপি ও ক্রেডিট ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, সাবেক এফএভিপি ও অপারেশন ম্যানেজার মীর মেসবাহ উদ্দীন হোসাইন।
আসামির তালিকায় আছেন– আলফা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী কাজী মোহাম্মদ দিলদার আলম, মডেল ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও আরামিট পিএলসির এও মোহাম্মদ মিছাবাহুল আলম, ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও এজিএম মো. আব্দুল আজিজ, ক্লাসিক ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও এজিএম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, আরামিট পিএলসির কর্মচারী মোহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী, মো. ইয়াছিনুর রহমান, মো. ইউছুফ চৌধুরী ও মো. সাইফুল ইসলাম।
মামলায় আসামি করা হয়েছে ইউসিবি পিএলসির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বজল আহমেদ বাবুল, সাবেক চেয়ারম্যান (আরএমসি) এম এ সবুর; সাবেক পরিচালক ইউনুছ আহমদ, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, আসিফুজ্জামান চৌধুরী, রোকসানা জামান চৌধুরী, বশির আহমেদ, আফরোজা জামান, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, মো. জোনাইদ শফিক, অপরূপ চৌধুরী, তৌহিদ সিপার রফিকুজ্জামান এবং ইউসিবি পিএলসির সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরীকেও।