কক্সবাজারের পেকুয়ার স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফ খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন র্যাব–১৫ কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাইফুল ইসলাম। তিনি আজাদীকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে রোববার (আজ) আনুষ্ঠানিকভাবে মিডিয়া ব্রিফ করা হবে।
এর আগে অপহরণের পর আরিফকে গুম করে খুনের ঘটনায় অন্যতম হোতা রুবেল খান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত রাতে তাকে পেকুয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। রুবেলকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পেকুয়া থানার ওসি সিরাজুল মোস্তফা।
এদিকে শিক্ষক আরিফ হত্যায় অভিযুক্ত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর ও তার একাধিক ভাইয়ের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট শেষে আগুন দেওয়া হয়। বর্তমানে এসব বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, ২৮ সেপ্টেম্বর পেকুয়া থেকে অপহরণের শিকার হন পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. আরিফ। পরবর্তীতে অপহৃতের মোবাইল থেকে কল করে স্বজনদের নিকট ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও অপহৃতের স্বজনদের নিকট কল করে মুক্তিপণ দাবিকারী হিসেবে রুবেলকে শনাক্ত ও তার বিস্তারিত পরিচয় ও অবস্থানস্থল উদঘাটনে সমর্থ হয় সংস্থাটি। পরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে র্যাব ১৫, র্যাব ১১ ও র্যাব ৭–এর যৌথ আভিযানিক দল র্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখার সার্বিক সহযোগিতায় রুবেলকে গ্রেপ্তারের মিশনে নামে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রুবেল চাঁদপুর সদর উপজেলার চরপুরচণ্ডী গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুল্লাহ খানের জ্যেষ্ঠ ছেলে।
র্যাব ১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত রুবেল অন্যতম। রুবেলই সরাসরি অপহৃতের স্বজনদের নিকট অপহৃতের মোবাইল থেকে দফায় দফায় কল দিয়ে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এছাড়া অপহরণের আগে প্রধান শিক্ষক মো. আরিফের গতিবিধির ওপর দীর্ঘদিন ধরে নজরদারিও করে রুবেল। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর রুবেল এই হত্যাকাণ্ড ও মুক্তিপণ আদায়ের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। ঘটনায় জড়িত অন্য অপরাধীকেও শিগগির আইনের আওতায় আনা হবে।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃত রুবেল আর কী কী তথ্য দিয়েছে–জানতে চাইলে তদন্তের স্বার্থে এ প্রসঙ্গে আর কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
অপহরণের ১৪ দিনের মাথায় গত শুক্রবার মো. আরিফের বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুকুর থেকে বস্তাবন্দি গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রুবেলকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে কক্সবাজারের পেকুয়া থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করেছে র্যাব।
এদিকে খুনের শিকার শিক্ষক আরিফের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকালে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। সন্ধ্যার দিকে পেকুয়া সদরের স্টেডিয়াম মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দাবি করা হয়, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমই শিক্ষক আরিফ হত্যাসহ লাশ গুমের মূল পরিকল্পনাকারী। তার একাধিক ভাইসহ সাঙ্গপাঙ্গারা জমির বিরোধ নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে শিক্ষককে অপহরণের পর চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরের বাড়িতে টর্চার সেলে রাখা হয়। সেখানে ঝুলিয়ে রেখে পৈশাচিক কায়দায় হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে শিক্ষক আরিফের বাড়ির পুকুরে ফেলা হয়। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ নানা আলামত জব্দ করেছে আইন–শৃক্সখলা বাহিনী।