সাফিল মিয়া (-১৯৭১)। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অসম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরোত্তম। সদ্যবিবাহিত সাফিল মিয়া ব্যস্ত ছিলেন বাড়ির কৃষিকাজ ও গৃহস্থালী কাজে। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। ঘরে বসে থাকতে পারলেন না তিনি। মা–বাবা, ভাইবোন ও নববধূকে রেখে যোগ দেন প্রতিরোধ যুদ্ধে। পরে ভারতে গিয়ে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন। প্রথম দিকে কিছুদিন ২ নম্বর সেক্টরের অধীন সীমান্ত এলাকায় গেরিলাযুদ্ধ করেন। এরপর নিয়মিত মুক্তিবাহিনীকে পুনর্গঠিত করা হলে নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার অন্তর্গত নদী সালদা। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে সালদা রেলস্টেশন ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা সালদা স্টেশন নিয়ন্ত্রণ করে রাখে। ওই স্টেশনের পাশের নয়নপুরে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটি। সেখানে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একটি দল এবং অদূরেই কুটি ও কসবা এলাকায় ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩৩ বালুচ রেজিমেন্টের অবস্থান। সেপ্টেম্বরের শেষ দিন মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল একযোগে নয়নপুর, সালদা রেলস্টেশন, কসবা, কুটিসহ বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালায়। মেজর সালেক চৌধুরীর নেতৃত্বে সাফিল মিয়া নেমে পড়েন সম্মুখযুদ্ধে। তারা সালদা নদী অতিক্রম করে সালদা রেলস্টেশনের পশ্চিমে একটি গোডাউন–সংলগ্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনারাও আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল। তারা সমস্ত শক্তি দিয়ে সাফিল মিয়াদের দলের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেও তেমন সুবিধা করতে পারছিলেন না। তাঁদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়। অন্যদিকে নয়নপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিবাহিনীর অপর দলের প্রচণ্ড আক্রমণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। নয়নপুর থেকে আসা পাকিস্তানি সেনারা মূল দলের সঙ্গে একত্র হয়ে সাফিল মিয়াদের দলের ওপর তীব্র গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলতে থাকে। সাফিল মিয়ার অসাধারণ বীরত্ব ও রণকৌশলে মুক্তিবাহিনী চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। একপর্যায়ে একদল পাকিস্তানি সেনা তাঁদের প্রায় ঘেরাও করে ফেলে। পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড গুলির কারণে তাঁদের কেউ মাথা তুলতে পারছিলেন না। ঠিক এ সময় এক ঝাঁক গুলি এসে লাগে সাফিল মিয়াসহ কয়েকজনের শরীরে। সাফিল মিয়া বুক ও হাতে গুলিবিদ্ধ হন। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ লা অক্টোবর সাফিল মিয়া শহীদ হন। বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরোত্তম খেতাবে ভূষিত করেন।