কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিনে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বিধিনিষেধ ভেঙে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট খুলেছে। যানবাহন ও মানুষের চলাচলও আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। খবরে বলা হয়, করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও বাইরে চলাচলকারী মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীনতা দেখা গেছে। মহাসড়ক ও শহর এলাকার প্রধান সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ছিল যথারীতি। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে জরিমানা, মামলা ও গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপরও মানুষ নানা অজুহাতে বাইরে বের হয়েছেন। সোমবারও বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসেছেন মানুষ। ঈদে গ্রামে যাওয়া মানুষ যেমন ফিরছেন, তেমনি ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে আসছেন তারা।
আজাদীতে প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মাঝেও দিনভর পায়ে হেঁটে শত শত মানুষ নগরীতে প্রবেশ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী কেবল যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এক্ষেত্রে পথচারীদের কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। এদিকে সড়কে তুলনামূলকভাবে প্রাইভেট গাড়ি ও মোটরসাইকেল চলাচলের পরিমাণ বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন পুলিশ জানান, মূলত পুলিশের নজর ছিল যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্সের দিকে। অনেকে বিভিন্ন যানবাহন ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে লুকিয়ে নগরীতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। যেসব পথচারী নগরীতে প্রবেশ করেন তাদেরকে থামিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। নগরীর প্রধান প্রবেশপথ নতুন ব্রিজ, সিটি গেট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা এবং বিআরটিএ নতুন পাড়া মোড়ে সরেজমিনের ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চৌকি বসিয়ে কঠোর লকডাউন কার্যকর করেন। এ সময় প্রাইভেট কার, সিএনজি, অ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান থামিয়ে তল্লাশি চালিয়ে তারপর নগরীতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। অঙিজেনের অদূরে বিআরটিএ নতুন পাড়া এলাকায় সকাল থেকে শত শত মানুষের জটলা লক্ষ্য করা গেছে। কর্মের তাগিদে এখনো শহরে ফিরছেন ঈদের ছুটিতে যাওয়া মানুষ।
গভীর উৎকণ্ঠায় বলতে হয়, হু হু করে বাড়ছে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। গড়ে প্রায় ২০০ মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রতিদিন গণমাধ্যমে এই মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে। পত্রিকার প্রথম পাতায় করোনায় আক্রান্ত, সুস্থ হয়ে ওঠা ও মৃত্যু-সংক্রান্ত খবর শেষে সংখ্যাতেই পর্যবসিত হয়। তবু আমরা ব্যাপক মাত্রায় সতর্ক হচ্ছি না। কাউকে সতর্কও করছি না। যে যার নিজের পরিমণ্ডলে ডুবে থাকছি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে অক্ষম।
সরকারের প্রচেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ দিলেও মানুষ যে মানছে না, তার জন্য উদ্বেগ বাড়ছে। কল-কারখানা বন্ধ রাখার নজির স্থাপিত হলো এবার কড়া লকডাউনে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো কারখানা খোলার আভাস পেয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত কঠোরতম বিধিনিষেধের মধ্যে কোনো শিল্প কারখানা খুললে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি। সংক্রমণ যে গতিতে ছড়াচ্ছে, তাতে এখন কঠোর বিধিনিষেধের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, হাসপাতাল, জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত মানুষ বের হচ্ছেন। হাসপাতালে যারা আছেন তাদের অ্যাটেনডেন্টরা আছেন, তাদের বের হতে হচ্ছে। রাস্তায় বের হয়ে মানুষ বলছে, চাকরিতে যেতে হচ্ছে। তারা যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম বলেছে, আমরা সেগুলো যাচাই করছি।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, ‘হাসপাতালের সিট সংখ্যা বৃদ্ধি ও বেশি ডাক্তার নিয়োজিত করে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে স্পেন, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, জার্মানির অনেক কিছু থাকা সত্ত্বেও এর মধ্যে জার্মানি করোনা মোকাবিলায় অসহায় হয়ে পড়েছিল। ভারতও হিমশিম অবস্থায়। তবে করোনা থেকে মুক্ত থাকতে সকলকে মাস্ক পরতে হবে।’ তাই বলা যায়, করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব শুধু সরকারেরই নয়, সাধারণ মানুষেরও। সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে এই করোনাকে রুখবার অন্য কোনো উপায় নেই।