সাধারণ করদাতাদের চেয়েও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া আদায়ে চসিকের জোর দেয়া উচিত

আজাদীর সাথে একান্ত আলাপে মাহমুদুল ইসলাম ।। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৩০ আগস্ট, ২০২২ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

সাধারণ করদাতাদের চেয়েও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পৌরকর আদায়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) জোর দেয়া উচিত বলে মনে করেন সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। এ জন্য প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ‘ক্রোকি’ পরোয়ানাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। গতকাল দৈনিক আজাদীর সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এসব কথা বলেন চসিকের এ প্রথম মেয়র। এ সময় তিনি মেয়র থাকাকালের সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে নিজের উদ্যোগ এবং কৌশলগুলোও স্মৃতিচারণ করেন।
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপুল অংকের ট্যাক্স বকেয়া রেখে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায়ের বিষয়টি নগরপিতার ভেবে দেখা উচিত। সরকারি প্রতিষ্ঠান দিবে না, তাহলে সাধারণ মানুষের দোষ কী। আমি মনে করি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সম্মতি আদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব বরাবর উপানুষ্ঠানিক পত্র (ডিও লেটার) দিতে পারেন বর্তমান মেয়র। এরপর সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধ ক্রোকি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। এর মাধ্যমে তাদের এই বার্তা দেয়া, যদি ট্যাঙ পরিশোধ না কর তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
প্রসঙ্গত, ৩৩ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চসিকের ২৩৩ কোটি ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ১৯০ টাকা পৌরকর বকেয়া আছে। এ প্রসঙ্গে চসিকের সাবেক প্রশাসক মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারি, আধা সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কর্পোরেশন যদি ট্যাক্স আদায় করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সাধারণ জনগণ কার কাছে যাবে। সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায়ের চেয়ে সরকারি, আধা সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করা বেশি উচিত। তিনি বলেন, কর্পোরেশন আইনের আওতায় থেকেও সরকারি, আধা সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ট্যাঙ আদায় করতে পারে। বর্তমান মেয়রের প্রতি আহবান থাকবে তিনি যেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সম্মতি নিয়ে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেন।
২০১৭ সালে স্থগিত হওয়া অ্যাসেসমেন্টের আলোকে আবারও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে গৃহকর আদায় শুরু করেছে চসিক। এতে অতিরিক্ত কর ধার্য করা হয়েছে অভিযোগ করে আপত্তি জানাচ্ছেন হোল্ডিং মালিকগণ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে মেয়র নাগরিক সংলাপ আহ্বান করতে পারেন। সেখানে তিনি কর্পোরেশনের ব্যয় নির্বাহ করার করা জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা তুলে ধরবেন। একইসঙ্গে কিভাবে কর আদায় করা যেতে পারে সে বিষয়ে নাগরিকদের কাছ থেকে পরামর্শ চাইতে পারেন।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। এ অবস্থায় মানুষ অর্থনৈতিক চাপে আছে। নাগরিকদের প্রতি নগরপিতার কিছু দায়িত্ব আছে। নগরপিতার দায়িত্ব হচ্ছে নগরবাসীর সুখ-দুঃখে পাশে থাকা। সে জায়গা থেকে ট্যাঙ নিয়ে মানুষের যে অভিযোগ সেটা সমাধানে মেয়রকে এগিয়ে আসতে হবে। সব কিছু আইনের মধ্যে উল্লেখ থাকে না। ট্যাঙ মানুষের উপর চাপ তৈরি করছে কীনা, মানুষের ট্যাঙ পরিশোধের সক্ষমতা আছে কীনা সেটা নগরপিতাকে দেখতে হবে।
মেয়র থাকাকালে চট্টগ্রাম বন্দর, রেলওয়ে, চিটাগং স্টিল মিল, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরসহ অনেকগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম পৌরকর নির্ধারণ করেন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্যাঙ পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেন তিনি। বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, দায়িত্বপালনকালে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পৌরকর আদায়ে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছিলাম। রেলওয়ের জিএম এর বাসা, গণপূর্ত অধিদপ্তরের এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের পদস্থদের বাসায় ক্রোকি পত্র পাঠিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ওই সময় আগ্রাবাদের বনানী ছিল সবচেয়ে বড় সিনেমা হল। তারা সিটি কর্পোরেশনের পৌরকর জমা দিতো না। আমরা তাদের প্রজেক্টের খুলে নিয়ে এসেছিলাম। সবকিছু কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের আইনের মধ্যে থেকেই করেছি।
সাবেক এ মেয়র বলেন, সরকারি সংস্থার কাছে যে টাকা পাব তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব বরাবর একটি উপানুষ্ঠানিক পত্র পাঠাই। পত্রে এটাও বলি, প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কর্পোরেশনের আইনের আলোকে ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি চাই। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি থাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে মন্ত্রণালয়ের অধীন ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীগণ কথা বলেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। যারা বলেছেন তাদের বলেছি বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, যখন আমি হোল্ডিং ট্যাঙ নির্ধারণ করছিলাম তখন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি বাইশ মহল্লাহকে নিয়ে আন্দোলন করে। এ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাইশ মহাল্লার সাথে আমার একটা চুক্তি হয়। পরে আন্দোলন থেমে যায়। আমিও শহরে যত বাঁশ এবং ছনের ঘর ছিল সবার ট্যাঙ মাফ করে দিই। ওই সময়ে মহল্লা কমিটির প্রতিনিধি দিয়ে আপিল বোর্ড করে দিয়েছিলাম। এতেও তারা সন্তোষ প্রকাশ করে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম পৌর কর্পোরেশনের প্রশাসক ছিলেন মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর হলে মেয়র হন তিনি। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে ফিরলেন ভারতে আটকে পড়া ৮৮ জেলে
পরবর্তী নিবন্ধনিষ্ক্রিয় করা হলো মর্টার শেল