সাত মেয়র প্রার্থীর ভোট ভাবনা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারীর কারণে স্থগিত থাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে বর্তমানে ৭ জন মেয়র প্রার্থী এবং ২৬৯ জন কাউন্সিলর (সাধারণ এবং সংরক্ষিত) প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে স্থগিত চসিক নির্বাচনের পুনরায় ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হলে মেয়র প্রার্থীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অনেকেই ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। একই সাথে অনেকে সুষ্ঠু ভোটের দাবি জানিয়ে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা চেয়েছেন। অনেকে আবার করোনার কারণে যে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে তা করোনোকালেই কেন নেয়া হচ্ছে সেজন্য ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারপরও অধিকাংশ প্রার্থী প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। একদিনের জন্যও
মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যাইনি-রেজাউল করিম
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এম রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর গতকাল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের নতুন তারিখ ঘোষণা করার পর আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থীর কাছে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইল তিনি বলেন, আমি তো করোনাকাল থেকেই মাঠে আছি। একদিনের জন্যও জনগণ থেকে দূরে সরে যাইনি। স্বাভাবিক ভাবেই সবার সাথে যোগাযোগ রয়েছে। সুতরাং নির্বাচনের প্রস্তুতি বেশ ভালো। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ তৃলমূলের দল। এই দলের নেতাকর্মীরা সব সময় মানুষের কাছকাছি থাকেন। করোনাকালীন সময়ে ৫/৬ মাস ধরে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে এবং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সাধারণ মানুষ ও ভাসমান মানুষগুলো পাশে দাঁড়িয়েছি। প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি। মার্চে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর থেকে আজকের দিন পর্যন্ত মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যাইনি। যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই মানুষের সাড়া পাচ্ছি।
নির্বাচন কমিশন ২৭ তারিখ নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রামের মানুষ ভালো ভাবেই তা গ্রহণ করেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর না থাকায় ওয়ার্ডের মানুষ জন্ম সনদ, জাতীয়তা সদন, ওয়ারিশান সদন পাচ্ছেন না। তাই নগরবাসী চান- তাড়াতাড়ি ভোট হোক। তারা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জানুয়ারির ২৭ তারিখ নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করায় প্রার্থীরা প্রচারণার অনেক দিন সময় পাবেন।

মানুষ ভোট দিতে পারাটা নিশ্চিত করতে হবে-ডা. শাহাদাত
ধানের শীষ নিয়ে চসিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল নির্বাচন কমিশন থেকে ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি আজাদীকে বলেন, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমার কোনো সংশয় নেই। তবে ভোট যাতে নিরপেক্ষ হয়, মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সেটা নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রায় ১০ লাখ মহিলা ভোটার আছেন। তাদেরকে নির্বাচনমুখী করতে হবে। মহিলা ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন সেই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কী উদ্যোগ নিচ্ছে সেটা দেখার বিষয়। আমি মনে করি অর্ধেকের মতো মহিলা ভোটারকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। কারণ আমাদের ভোট কালচার চলে গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনসহ দেশের আরো কয়েকটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দেখা গেছে, বহিরাগতরা গিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে। নির্বাচনে বহিরাগতদের ঠেকাতে হবে।

নির্বাচনে নিরাপত্তার ব্যাপারটাও চিন্তা করতে হবে- এমএ মতিন
ইসলামী ফ্রন্টের মেয়র প্রার্থী এমএ মতিন। মোমবাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনি। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনার কারণে নির্বাচন স্থগিত করার জন্য আমরাই প্রথম দাবি জানিয়েছিলাম। আমাদের পর বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোও নির্বাচন স্থগিতের দাবি করেছিল। সেই দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন চসিক নির্বাচন স্থগিত করে। কিন্তু এখনো করোনা শেষ হয়নি। বরং পরিস্থিতি আগেও চেয়ে আরও ভয়াবহ। ওই সময় (মার্চে) নির্বাচন বন্ধ রেখে এখন আবার যদি নির্বাচন নেয়া যায়- তাহলে এতোদিন আমরা কেন ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। নির্বাচন কমিশনের তো কোনো ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি হয়েছে আমাদের (প্রার্থীদের)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- শীত মৌসুমে করোনার প্রকোপ আরো বাড়তে পারে। তাই আমার দাবি, শুধু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেই হবে না; নিরাপত্তার বিষয়টাও চিন্তা করতে হবে।

আমাদের সাথে আলোচনাকরে তারিখ ঘোষণা করলে ভালো হতো-ওয়াহেদ মুরাদ
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ। চেয়ার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনি। গতকাল আজাদীকে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি আজাদীকে জানান, নির্বাচন কমিশন ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। তারিখটা খুবই কাছে হয়ে গেল। যে করোনা পরিস্থিতির কারণে চসিক নির্বাচন মার্চের ২১ তারিখ স্থগিত হয়ে গেল- আবার সেই করোনার মধ্যেই আবার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আমাদের সাথে বসে-ন্যূনতম আলাপ-আলোচনা করে তারিখ ঘোষণা করলে ভালো হতো।

আমরা জনগণকেমৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না- জান্নাতুল ইসলাম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মো. জান্নাতুল ইসলাম। তিনি নির্বাচন করছেন হাতপাখা প্রতীক নিয়ে। গতকাল প্রতিক্রিয়ায় ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি আজাদীকে জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু করোনাও বাড়ছে। আমাদের কাছে পদ থেকে মানুষের নিরাপত্তাটাই বেশি। নির্বাচন যখন স্থগিত করা হয়েছিল- তখন কমিশন আমাদেরকে বলেছিল- আমাদেরকে ডাকবে। এখন এই করোনার মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হল- অথচ আমাদেরকে ডাকলও না। এটা আমলাদের স্বেচ্ছাচারিতা বলা যায়। আমরা তো জনগনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। সামাজিক দূরত্ব মেনে কি নির্বাচন হয়? তবে আমাদের প্রস্তুতি আছে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে আছি-আবুল মনজুর
এনপিপির মেয়র প্রার্থী আবুল মনজুর। স্থগিত হয়ে যাওয়া চসিক নির্বাচনে তিনি আম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। স্থগিত হয়ে যাওয়া চসিক নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় বেশ প্রতিদিনই মাঠে ছিলেন বলে জানান তিনি। নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে জানিয়ে আবুল মনজুর বলেন, দলের পক্ষ থেকে আমাকে প্রার্থী করেছেন। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা চান নির্বাচন হোক। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভলো হতো। তারপরও আমাদের প্রস্তুতি আছে।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠলে তখন নির্বাচন হলে ভালো হতো-খোকন চৌধুরী
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী খোকন চৌধুরী। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাতি নিয়ে। করোনার কারনে নির্বাচন স্থগিত থাকলেও খোকন চৌধুরীর সামজিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে বলে জানান তার কর্মী সমর্থকরা। নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে জানিয়ে তিনি জানান, করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠলে তখন নির্বাচন হলে ভালো হতো। তারপরও কমিশন যখন তারিখ ঘোষণা করেছেন- আমাদেরকে তো নির্বাচন করতেই হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাংবাদিক নেতা শহীদ উল আলমসহ ৭ জনের আগাম জামিন আবেদন খারিজ
পরবর্তী নিবন্ধ‘বদি আমার বাবা’ ডিএনএ টেস্টের দাবি যুবকের