দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের সাতকানিয়ার তেমুহনী অংশে বন্যায় তলিয়ে যাওয়া এলাকায় নতুন ভাবে ৪টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ আগে থেকে কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে পুরোদমে কাজ চলছে। রেললাইনে নতুনভাবে কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় মহাখুশি স্থানীয় লোকজন। তারা জানিয়েছেন, নতুনভাবে নির্মিতব্য কালভার্টগুলো বর্ষা মৌসুমে রেললাইনের পূর্ব পাশের এলাকায় অতিরিক্ত পানি হওয়ার ঝুঁকি কমাবে। এসব কালভার্ট দিয়ে পানি নিষ্কাশন দ্রুত হবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রেললাইনে আগে থেকে পর্যাপ্ত কালভার্ট–ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু গত বর্ষা মৌসুমে রেললাইনের কিছু এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় এবং বসত ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। ফলে ভবিষ্যতে যাতে জনসাধারণের ক্ষতি না হয় সেই কথা বিবেচনা করে নতুনভাবে কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এদিকে, রেললাইনে নতুনভাবে কালভার্ট নির্মাণের কাজ চললেও ১ ডিসেম্বর থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। কালভার্টের কাজগুলো এমন ভাবে করা হচ্ছে উপরে ট্রেন চলবে আর নিচে নির্মাণ কাজ চলবে। গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন করেন।
স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় পর্যাপ্ত কালভার্ট–ব্রিজের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল এলাকাবাসী। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা একাধিক বার মানববন্ধনও করেছেন।
এদিকে, রেললাইনে কাজ শেষ হওয়ার আগে গত আগস্ট মাসের শুরুতে টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ার উপর দিয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বয়ে যায়। তখন সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পানির স্রোতে রেললাইনের নিচ থেকে পাথর, মাটি, কংকর ভেসে যায়। কোথাও কোথাও বিশালাকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়। এমনকি কয়েকটি স্থানে রেললাইন হালকা দেবেও যায়। আবার কিছুটা বেঁকেও যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর ও রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান তলিয়ে যাওয়া রেললাইন সরেজমিন পরিদর্শনে আসেন। এসময় স্থানীয় লোকজন জানান, তেমুহনী এলাকায় গত এক শত বছরের মধ্যে এতো পানি হয়নি। রেললাইনে পর্যাপ্ত সংখ্যক কালভার্ট–ব্রিজ না হওয়ায় পানি সরতে পারেনি। রেললাইনের পূর্ব পাশের এলাকাগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা বেশি হয়। তখন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর কালিয়াইশ থেকে তেমুহনী এলাকা পর্যন্ত রেললাইন ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় লোকজনের কথা শুনে তেমুহনী এলাকায় নতুনভাবে ৪টি কালভার্ট নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরই অংশ হিসেবে তেমুহনী এলাকায় ২টি স্থানে ৪টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।
গতকাল তেমুহনী এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, দুইটি স্থানে রেললাইন খুলে ফেলা হয়েছে। সেখানে থেকে পাথর, কংকর সরিয়ে নেয়া হয়েছে। স্কেভেটর দিয়ে রেললাইনের মাটি কেটে কালভার্ট নির্মাণের জন্য উপযোগী করা হচ্ছে। কালভার্টগুলো এমন ভাবে করা হচ্ছে যাতে উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে আর নিচে কালভার্টের নির্মাণ কাজ চলবে। ফলে পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর থেকে দোহাজারী–কক্সবাজার লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী জানান, সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় আগে থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কালভার্ট–ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু গত আগস্ট মাসে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় রেললাইন তলিয়ে যাওয়ার পর নতুন ভাবে ৪টি কালভার্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। কালভার্ট গুলো হয়ে গেলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। পানি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্কাশন হতে পারবে। কালভার্ট নির্মাণের জন্য প্রকল্প ব্যয় বাড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, অবশ্যই বাড়বে, কালভার্টের টাকাগুলো যোগ হবে। নির্মিতব্য কালভার্টের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি জানান, কাজ শেষ হতে ২–৩ মাস সময় লাগবে। কারণ কাজগুলো খুব সাবধানে করতে হবে। নিচে কালভার্টের কাজ চললেও উপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে। এজন্য কিছুটা সময় লাগবে।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের দোহাজারী থেকে চকরিয়ার করাইয়া ঘোনা পর্যন্ত এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক (ডিপিএম) প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান জানান, দোহাজারী জিরো পয়েন্ট থেকে ৩.৮ কিলোমিটার ও ৪.২ কিলোমিটার এলাকায় দুইটি স্থানে ৪টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি কালভার্টের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১১.৫ কিলোমিটার। তিনি জানান, কালভার্টগুলোর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। এসব কালভার্টের কাজ শেষ হতে ২ মাসের অধিক সময় লাগবে। তবে কাজ চলমান থাকলেও দোহাজারী–কক্সবাজার লাইনে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
কেঁওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ওচমান আলী জানান, তেমুহনী এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক কালভার্ট–ব্রিজ নির্মাণ না করায় স্থানীয় লোকজন শুরু থেকে আন্দোলন করে আসছিল। গত বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ বন্যায় এলাকার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়। ফলে এখন
কালভার্ট নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।