সাতকানিয়া উপর দিয়ে সম্প্রতি বয়ে যাওয়া স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এ সময় কিছু প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ভেঙে গেছে, আবার কোথাও দেবে গেছে।
নদী–খালের তীরবর্তী প্রতিষ্ঠান গুলোর মাঠ, বারান্দা, শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চের উপর জমেছে কয়েক ফুট উচু কাদামাটি। ফলে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো পুরোপুরি পাঠদান কার্যক্রম সম্ভব হচ্ছে না। অতিরিক্ত ক্ষতি হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে আংশিকভাবে পাঠদান চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি বরাদ্দ না পেলেও পরিচালনা কমিটি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রচেষ্টায় পুরোদমে শ্রেণি কার্যক্রমে ফেরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের কাটগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ৩ থেকে সাড়ে ফুট উচু কাদামাটি। বিদ্যালয়ের বারান্দায় দেড় থেকে ২ ফুট উচু কাদা। শ্রেণিকক্ষের মেঝেতে দেড় থেকে ২ ফুট ও বেঞ্চের উপর প্রায় ১ ফুট উচু কাদা। দুইটি শ্রেণিকক্ষ থেকে কাদা মাটি সরিয়ে নিয়েছে। সেখানে আংশিকভাবে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। মাঠের এক পাশ দিয়ে শ্রমিকরা হাটার ব্যবস্থা করে বারান্দা থেকে কাদামাটি কেটে নিচ্ছে। অন্যান্য শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চগুলোতে এখনো কাদামাটি। শিক্ষকরা জানিয়েছেন পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চ থেকে কাদামাটির আস্তরণ সরানো হবে।
কাটগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহআলম মোহাম্মদ খোরশেদ জানান, বিদ্যালয়ের অফিস ও শ্রেণিকক্ষে ৩–৪ ফুট উচু পানি হয়। সামনের মাঠে আরো বেশি হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর দেখি মাঠে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট কাদামাটি। স্কুলের বারান্দা, প্রত্যেকটি শ্রেনিকক্ষ ও বেঞ্চের উপর কাদামাটিতে ভরা। তখন এসব কাদা ডিঙিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কয়েকদিন পর কিছুটা শুকিয়ে উঠলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আমি ব্যক্তিগত ভাবে টাকা দিয়ে ৬টি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে ২টি থেকে কাদামাটি সরানোর ব্যবস্থা করি। এরপর ওই দুইটি কক্ষে আংশিক ভাবে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করি। এখন অন্যান্য শ্রেণিকক্ষ, বারান্দা ও বেঞ্চের কাদামাটি সরানোর ব্যবস্থা করছি। কাটগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ ইছহাক জানান, আমাদের স্কুলটি নদীর খুব কাছাকাছি হওয়ায় কাদা বেশি জমেছে। মাঠ, বারান্দা, শ্রেণিকক্ষ, অফিসের ফ্লোর এবং বেঞ্চের উপর জমে থাকা কাদা পুরোপুরি সরিয়ে নিতে এক লক্ষ টাকার উপরে খরচ হবে। আমরা প্রাথমিক ভাবে দুইটি কক্ষ থেকে কাদা পরিস্কার করে আংশিক ভাবে ক্লাসের ব্যবস্থা করেছি।
কাটগড় আর পূর্ব বাজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, পুরো উপজেলার বেশ কিছু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কোনটির ফ্লোর দেবে গেছে, কোনটির শ্রেণিকক্ষ ভেঙ্গে গেছে, আবার কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেঝেতে এবং বেঞ্চ কাদায় ভরে গেছে। আবার ক্ষতিগ্রস্থ এসব প্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন্য এখনো পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন বরাদ্দও দেয়া হয়নি। ফলে পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকরা মিলে যতটুকু পেরেছে সংস্কার করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করেছে। ফলে সব প্রতিষ্ঠানে এখনো পুরোদমে ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে জরুরী ভিত্তিতে বরাদ্দ দিয়ে সংস্কার করা দরকার বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাহাবুব জানান, বন্যায় ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতির বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য এখনো পর্যন্ত কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। কাটগড় ও পূর্ব বাজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সেলিম উদ্দিন জানান, বন্যায় উপজেলার অধিকাংশ স্কুল, মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন ক্লাস চলছে।