সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে দুজন নিহতের ঘটনায় মামলা

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১০ মার্চ, ২০২৫ at ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহতের ঘটনার ৬ দিন পর সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলাম মানিককে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে মানিকের তিন ভাই মো. হারুন, মো. মমতাজ ও মো. কামরুল ইসলাম সরাসরি অংশ নিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। মামলায় মোট ৪৭ জনের উল্লেখ করা এবং ১০/১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে মো. হারুনকে ১ নং আসামি করা হয়েছে। মামলায় আরো বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমজান আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসেন কবির, সদস্য মোখলেছুর রহমান।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আবু ছালেক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী এবং চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা। তিনি আওয়ামী লীগের শাসনামলে মামলাহামলা ও জুলুমনির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। ৫ আগস্ট পরবর্তী তিনি পুনরায় বাড়িতে ফিরে আসেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ছনখোলায় আবদুল নুর নামের এক ব্যক্তির একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আবদুল নুর এ ঘটনা আবু ছালেক ও তার বন্ধু নেজাম উদ্দিনকে অবহিত করেন। পরে ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ছনখোলা এলাকায় আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিন অটোরিকশা পোড়ানোর বিষয়ে একটি সালিস বৈঠক করেন। ওই সালিস বৈঠকে আবদুল নুরের গাড়িতে কারা আগুন লাগিয়েছেন, তা শনাক্ত হয় এবং শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সাত লাখ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। আবদুল নুর ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সন্তুষ্ট হননি বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজন ৩ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সমাধানের কথা বলে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় ডেকে নিয়ে যান। এরপর সালিস বৈঠক চলাকালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে মারধর শুরু করেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী ছনখোলা পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর মামলার প্রধান আসামি মো. হারুন একটি পিস্তল নেজাম উদ্দিনের লাশের পাশে রেখে পালিয়ে যান।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এওচিয়ার ছনখোলায় গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় একটি মামলা করা হয়। নিহত আবু ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। পুলিশ মামলায় নাম আসা আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

উল্লেখ্য গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গণপিটুনিতে মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৩) ও আবু ছালেক (৩৮) নামে দুই ব্যক্তি ঘটনাস্থলে নিহত হয়। এলাকায় তাঁরা জামায়াতের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিতি। ওইদিন গুলিতে আরো ৫ জন এলাকাবাসী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই মুমিনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত
পরবর্তী নিবন্ধইসলামিক ফ্রন্ট বংলাদেশ দক্ষিণ জেলার আলোচনা সভা