সাতকানিয়ায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৮ জন আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে কাঞ্চনার ফুলতলা এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রাম–১৫ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবের গতকাল দুপুরে কাঞ্চনায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে ফুলতলা–মনুফকির হাট সড়ক উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনের কর্মসূচি ছিল। এ উপলক্ষে কাঞ্চনা ইউপি চেয়ারম্যান রমজান আলী এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. ছালামের নেতৃত্বে দুই গ্রুপ ফুলতলা এলাকায় আলাদাভাবে অবস্থান নেয়। অনুষ্ঠানস্থলে এম এ মোতালেব এমপি অতিথিদের সাথে পৌঁছার আগে পূর্বের বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের নেতা–কর্মীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান রমজান আলী (৬০), ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. ছালাম (৫১), তার ভাই মাহামুদুল হক (৪০), শাহাদাত হোসেন (২৬), আরমান উদ্দিন (২৭), আরকান উদ্দিন (১৭), জিসান (২২) ও জুয়েল (১৮) আহত হয়। আহতদেরকে উদ্ধার করে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙেসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কাঞ্চনা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. ছালাম জানান, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে চেয়ারম্যান রমজান আলীর সাথে আমার বিরোধ রয়েছে। গতকাল ফুলতলা–মনুফকির হাট সড়ক উদ্বোধনের জন্য সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবের আগমণকে কেন্দ্র করে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ফুলতলা এলাকায় অবস্থান নিই। অল্প দূরুত্বে চেয়ারম্যান রমজান আলীর নেতৃত্বেও ইউপি সদস্য ও দলীয় কিছু নেতাকর্মী জড়ো হয়। এম এ মোতালেব অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার কিছুক্ষণ আগে চেয়ারম্যান রমজান আলীর উপস্থিতিতে তার পুত্র আরমান এবং আরকানের নেতৃত্বে কয়েকজন উশৃঙ্খল লোক অতর্কিত আমার ছোট ভাই মাহামুদুল হকের উপর হামলা চালায়। তাকে বাঁচানোর জন্য আমি দৌঁড়ে গেলে তারা আমাকেও মারধর করে। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় আমি ও আমার ভাইসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছি।
কাঞ্চনা ইউপি চেয়ারম্যান রমজান আলী জানান, সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবের আগমণকে কেন্দ্র করে ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মীদেরকে সাথে নিয়ে ফুলতলায় অবস্থান করছিলাম। এ সময় হঠাৎ ছালাম, মাহামুদুল হক ও আলমের নেতৃত্বে কয়েকজন এসে আমার পাঞ্জাবি ধরে টানাহেঁচড়া করে। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এতে আমি, আমার দুই ছেলেসহ ৬–৭ জন আহত হয়েছি। চেয়ারম্যান আরো জানান, আমার উপর হামলাকারীরা বিগত সংসদ নির্বাচনে আবু রেজা নদভীর পক্ষে ছিল। আমি সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবকে দিয়ে উদ্বোধন করাতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আমার উপর হামলা চালিয়েছে।
এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনার কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেন সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব। পরে তিনি উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদেরকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সড়কের উদ্বোধন শেষ করেন। এ সময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান ও উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আন্জুমান আরা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানান, সড়কের উদ্বোধন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। এর আগে বিগত ইউপি নির্বাচন এবং জায়গা দখল সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান রমজান আলী ও যুবলীগ নেতা মো. ছালামের পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সড়কের উদ্বোধনের সময় কোন ধরনের ঝামেলা হয়নি। উভয় পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করবো সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ প্রিটন সরকার জানান, পূর্বের বিরোধকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান রমজান আলী এবং মো. ছালামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কয়েকজন হালকা আহত হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ কোন ধরনের অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।