সাগর থেকে ‘প্লাস্টিক বর্জ্যের দানব’ এসে দাঁড়াল সৈকতে

দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে কক্সবাজারে উদ্যোগ

কক্সবাজার প্রতিনিধি | রবিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করছে বঙ্গোপসাগরের উপর। কিন্তু প্লাস্টিক দূষণের কবলে সেই বঙ্গোপসাগর এখন ধুঁকছে। আর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এর প্রাণবৈচিত্র্যে। প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরির জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে স্থাপন করা হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যের তৈরি বিশালাকৃতির এক ‘দানব’।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশন লিমিটেডের সহায়তায় বেসরকারি সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন গত বৃহস্পতিবার প্লাস্টিক বর্জ্যের দানবটি তৈরি করে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্টের মাঝামাঝি সীগাল পয়েন্টে স্থাপিত এই প্লাস্টিক দানবটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। দানব দেখতে ভিড় করছেন পর্যটকরা।

পর্যটক ও স্থানীয়রা বলছেন, প্লাস্টিক বর্জ্যকে দানবরূপে তুলে ধরে প্লাস্টিকের দূষণের বিরুদ্ধে মানুষের বিবেককে নাড়া দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। গত এক মাস ধরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্লাস্টিক দূষণ রোধে প্লাস্টিকের বিনিময়ে উপহার কর্মসূচি শুরু করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এই ক্যাম্পেইনে পর্যটক ও স্থানীয় লোকজন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিয়ে নিত্যপ্র্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করেছেন। গত বুধবার এসব প্লাস্টিক দেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে করে কঙবাজার সমুদ্র সৈকতে আনা হয়। এরপর তৈরি করা হয় প্লাস্টিকের এই দানব।

আয়োজকরা বলছেন, মানুষের মধ্যে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরতে ৩৪ ফুটের বিশাল এই দানব আকৃতির স্ট্যাচুটি তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫ টন প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবহৃত হয়েছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহারের পর সেগুলো যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। এরপর সেগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিক হয়ে সাগরে মিশে যায় এবং সেখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশকে বিপন্ন করে। এ কারণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি মানব দেহেও এর ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এই স্ট্যাচুটি ১৫ দিন সমুদ্র সৈকতে প্রদর্শন করা হবে বলে জানান তারা।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কঙবাজারে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সাগরের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য। প্লাস্টিক দূষণ রোধে সচেতনতা বাড়ানো না গেলে আমাদের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। তাই এখনই পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন বিপন্ন। প্লাস্টিকের কুফল নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন প্রশংসার দাবি রাখে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামরিক ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়াচ্ছে জাপান
পরবর্তী নিবন্ধইউক্রেনে অন্যতম বৃহত্তম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার