সাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | মঙ্গলবার , ২১ মে, ২০২৪ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগরে মাছধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা গত রোববার দিবাগত মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় কার্যকর থাকবে। ট্রলার মালিকরা জানান, সাগরে মাছধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত রোববার রাত ১২টার আগেই কক্সবাজারের সকল মাছধরার নৌকা বঙ্গোপসাগর থেকে ঘাটে ফিরে আসে। ট্রলারগুলো বর্তমানে শহরের বিভিন্ন নদী ও ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে বলে জানান জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ।

তিনি জানান, গত বছর অক্টোবরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বঙ্গোপসাগরে আশানুরূপ ইলিশের দেখা পায়নি জেলেরা। তবে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে ইলিশ যখন গভীর সাগর থেকে উপকূলমুখী হয় এবং জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করে, সেই মুহূর্তেই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে মাছ না ধরেই ঘাটে ফিরে এসেছেন জেলেরা।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কক্সবাজারে ছোট বড় ৭ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। চলতি মৌসুমে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়েনি। যেগুলো ধরা পড়েছে, সেগুলোও আকারে খুব ছোট। এছাড়া অন্যান্য জাতের মাছের অবস্থাও একই। ফলে কক্সবাজারের একেকজন ট্রলার মালিক এখন কোটি টাকার ঋণ বহন করছে।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি জানায়, বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এরমধ্যে ইলিশ ধরা হয় ৪ থেকে ৫ আঙুলের ফাঁসযুক্ত সুতার জাল দিয়ে, যেটি ভাসা জাল নামেই জেলেদের কাছে পরিচিত। আর সাগর থেকে তাইল্যা ও কোরাল মাছ ধরা হয় ২ থেকে ৩ আঙুলের ফাঁসযুক্ত এক ধরনের রক জাল দিয়ে, যেটি তাইল্যা জাল নামেই পরিচিত। কিন্তু গত চলতি মৌসুমে ভাসা জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় অধিকাংশ জেলে তাইল্যা জালের দিকে ঝুঁকেছিল। কিন্তু তাইল্যা জালেও এবছর আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়েনি। আর যখন ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করে তখনই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে জেলেরা। এরফলে কঙবাজারের লক্ষাধিক জেলে শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।

কঙবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, রোববার মধ্যরাত (২০ মে) থেকে মাছধরা ও পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট এখন খা খা প্রান্তরে পরিণত হয়েছে ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষে রোববার মধ্যরাত ১২টা থেকে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাগরে ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখতে প্রচারপ্রচারণা চালানো হচ্ছে। কেউ এ সময়ে সাগরে গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে। এরআগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলোকে ২০১১ সাল থেকেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়, যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধইলিয়াছ ব্রাদার্সের এমডিসহ ৫ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা