সাগরে মাছ ধরতে প্রস্তুত জেলে-বহদ্দাররা

২৩ জুলাই শেষ হচ্ছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | সোমবার , ৮ জুলাই, ২০২৪ at ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগরে মাছধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার শেষে আর মাত্র পক্ষকাল পর ফের শুরু হচ্ছে মাছ ধরা। ফলে প্রায় ২ মাস ধরে ঝিমিয়ে থাকার পর কক্সবাজার সাগরপাড়ের জেলেপল্লীগুলোতে ধীরে ধীরে ফিরছে প্রাণচাঞ্চল্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ২৩ জুলাই দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে সাগরে রওয়ানা দেবেন জেলেরা। কক্সবাজার শহরের প্রধান পোতাশ্রয় বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট পয়েন্ট, মাঝিরঘাট, নাজিরারটেক, খুরুশকুল, শহরতলীর কলাতলীদরিয়ানগর ঘাটসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কিছু কিছু জেলেশ্রমিক জালটোনা ও নৌকা মেরামতসহ সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথেই যাতে সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারেন তারই লক্ষ্যে এ প্রস্তুতি চলছে বলে জানান জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ।

তিনি জানান, কক্সবাজারে ছোট বড় ৭ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। এরমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো ৮/১০ দিনের রসদ নিয়ে এবং তাইল্যা জালের বোটগুলো এক সপ্তাহের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আবার ৭/৮ আঙুলের ফাঁসযুক্ত ফইল্যা জালের বোটগুলো সাগরে মাছ ধরতে যায় ৫/৬ দিনের রসদ নিয়ে। এই বোটগুলো রূপচান্দা জাতীয় মাছ ধরে। এছাড়া চাউপ্পা জাল, ডোবা জাল, চামিলা জাল ও চোখফোলা জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে যায় এবং মাছ ধরে দিনে দিনেই ফিরে আসে। এই ধরনের জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। বোটগুলোতে একেক মৌসুমে একেক প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ে। তবে কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়া মাছের ৬০% ভাগই ইলিশ। নিষেধাজ্ঞার কারণে গত ৫০ দিন ধরে সকল প্রকার মাছ ধরা নৌকা ঘাটে রয়েছে।

এ নিষেধাজ্ঞার কারণে বরফকলগুলোও বন্ধ রয়েছে এবং সেই সাথে মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরাও বেকার রয়েছেন বলে জানান কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী।

তিনি বলেন, গত ১৯ মে দিবাগত মধ্যরাত (২০ মে) থেকে সাগরে মাছধরা ও পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট খা খা প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার দিন যতই ফুরিয়ে আসছে ফিশারিঘাটসহ অন্যান্য জেলেপল্লীগুলোতেও জেলেদের আনাগোনা বাড়ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষ্যে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু চলছে। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাগরে ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকায় তালিকাভুক্ত ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের কাছে ইতোমধ্যে ৬৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।

তবে জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের তালিকায় প্রকৃত জেলেদের পরিবর্তে অধিকাংশই অন্য পেশার লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে হাজার হাজার প্রকৃত জেলে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ পাননি।

তিনি এ ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

উল্লেখ্য, সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে। এরআগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষ্যে ছোট ট্রলারগুলোকে ২০১১ সাল থেকেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়, যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা, অভিযুক্ত স্বামী গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধস্টেশন রোডে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে শ্রমিকের মৃত্যু