সাগরে ভেসে গেল চবির তিন শিক্ষার্থী, একজনের মরদেহ উদ্ধার

তিনজনই ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের শিক্ষার্থী

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বুধবার , ৯ জুলাই, ২০২৫ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের হিমছড়িতে সাগরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ হয়েছেন আরো দুই শিক্ষার্থী। নিহতনিখোঁজ তিনজনই চবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের শিক্ষার্থী। প্রথম বর্ষের লিখিত পরীক্ষা শেষে তারা পাঁচ বন্ধু কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলেন। তারমধ্যে তিনজন সাগরের নিষিদ্ধ ও জনমানবহীন পয়েন্টে গোসলে নেমে করুণ এ পরিণতির মুখে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের হিমছড়ি সৈকত এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

নিহত কে এম সাদমান রহমান সাবাব (২২) ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা কে এম আনিছুর রহমানের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২৩২০২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মো. ফরহাদ হোসেন হলে থাকতেন তিনি। নিখোঁজ অপর দুই শিক্ষার্থী হলেন বগুড়ার দক্ষিণ সনসনিয়া গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে অরিত্র হাসান (২২) ও বগুড়া সদরের নারুলি দক্ষিণের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের ছেলে আসিফ আহমেদ (২২)। তারা দুজনও বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগ ও একই আবাসিক হলের শিক্ষার্থী। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তারা সাগরের তলদেশে সৃষ্ট গুপ্তখালে আটকা বা দূরে ভেসে গেছে বলে ধারণা উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের।

তাদের উদ্ধারে তল্লাশি অভিযান চালায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফ গার্ড, জেলা প্রশাসনের সৈকতকর্মী, ফায়ার সার্ভিস ও পর্যটন পুলিশের সদস্যরা। উদ্ধারকর্মীরা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় অভিযান চালাতে সমস্যা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এমনিতেই সাগর উত্তাল, তারউপর হিমছড়ি সৈকত পয়েন্ট বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে একাধিক গুপ্তখালের সৃষ্টি হয়েছে। তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি নিখোঁজদের উদ্ধারে।

নিহত ও নিখোঁজদের সঙ্গে থাকা সহপাঠী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাদমান ও তার সহপাঠীদের প্রথম বর্ষের লিখিত পরীক্ষা সোমবার শেষ হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ওই দিন বিকেলে সাদমানসহ পাঁচজন কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। এর মধ্যে তিনজন গতকাল সকাল ৭টার দিকে হিমছড়ি সৈকত এলাকায় সাগরে গোসল করতে নেমে পানিতে ভেসে যান। কিছুক্ষণ পর সাদমানের লাশ সৈকতে ভেসে এলেও অপর দুজনের খোঁজ মেলেনি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গোপসাগরে এখন লঘুচাপ চলছে, এ কারণে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোসলে নামতে নিষেধ করে সৈকতের বিভিন্ন স্থানে একাধিক লাল নিশানা ওড়ানো হচ্ছে। এরপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেকে গোসলে নেমে বিপদে পড়ছেন। নিহত সাদমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ মর্গে পাঠায়। নিখোঁজ দুজনকে উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৈয়বুর রহমান বলেন, কক্সবাজারটেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপ এলাকার ক্যাম্পইনকক্স রিসোর্টে পাঁচ বন্ধু উঠেছিলেন। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ যেন গোসলে নামতে না পারে, সে বিষয়ে পুলিশের ব্যাপক কড়াকড়ি রয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনায় পতিত শিক্ষার্থীরা যে পয়েন্ট দিয়ে নেমেছে সেখানে পুলিশের তদারকি থাকে না।

এদিকে চবি ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২৩২০২৪ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী কে এম সাদমান রহমান সাবাব এর আকস্মিক মৃত্যুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার, উপউপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও উপউপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তারা একই বিভাগের ২০২৩২০২৪ শিক্ষাবর্ষের আরও দুই জন মেধাবী শিক্ষার্থী অরিত্র হাসান ও আসিফ আহমেদের নিখোঁজ থাকার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. আবদুল মান্নান, আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দও গভীরভাবে শোক ও উদ্বেগ জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাড়ে ১০ হাজার কোটির টাকা আদায়ে এস আলমের চিনি কারখানা নিলামে
পরবর্তী নিবন্ধঅব্যাহতি মানেন না আনিসুল-হাওলাদার-চুন্নু