সাগরে জাগছে নতুন চর, আয়তন বাড়ছে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার

দুই দ্বীপে নির্মিত হবে সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | বৃহস্পতিবার , ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে অবস্থিত কক্সবাজারের উপকূলীয় দুই দ্বীপ মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় খুলছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃতির রূঢ় আচরণে এই দুটি দ্বীপের বেড়িবাঁধসহ লোকালয় ও জনবসতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সাগরে বিলীন হলেও প্রকৃতি আবার উভয় দ্বীপের আয়তন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

সামপ্রতিককালে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী দুই দ্বীপের পশ্চিমে জেগে উঠছে নতুন নতুন চর। ইতোমধ্যে দ্বীপ দুটিতে দৃশ্যমান হয়ে যুক্ত হচ্ছে জেগে উঠা চরের আনুমানিক তিন হাজার একর জমি। এই জমি সংরক্ষণ করে কাজে লাগিয়ে স্থাপন করা যেতে পারে মাঝারি ও বড় শিল্প কারখানা। সরকার ইতোমধ্যে উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলের টেকসই উন্নয়নে নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে, নির্মিত হবে দুর্যোগ সহনীয় সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ। এজন্য ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা যায়, সমপ্রতি কুতুবদিয়া দ্বীপের পশ্চিমে জেগে উঠেছে প্রায় ২ হাজার একর চর ভূমি। এতে বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছে কুতুবদিয়া বন বিভাগ। জেগে উঠা এ বিশাল চর ভূমি সংরক্ষণ করতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে বনায়ন শুরু করেছে কুতুবদিয়া বন বিভাগ। উপকূলীয় বন বিভাগ কুতুবদিয়ার রেঞ্জ অফিসার আবদুর রাজ্জাকের উদ্যোগে সেখানে বাইন গাছ রোপণের কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. গোলাম কবির, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কানন সরকার, রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক, কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর, বড়ঘোপ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম, কুতুবদিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস কে লিটন কুতুবী, বন সহকর্মী আবদুস সাত্তার, আকতার কামাল, রহমত উল্লাহ, শাহ আলম ও মিজান।

রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কুতুবদিয়া দ্বীপের পশ্চিমে জেগে উঠা চরকে সংরক্ষণ করে কাজে লাগিয়ে শিল্প ও শিক্ষা উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন অথবা মাঝারি ও বড় শিল্প কলকারখানা গড়ে তুলতে পারেন। এ চরে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার একর ভূমি দৃশ্যমান। অতি সামপ্রতিক সময়ে জেগে উঠা এ চরকে সংরক্ষণ করতে আমরা বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছি।

অপরদিকে মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিমে ও জেগে উঠছে নতুন নতুন চর। ইতোমধ্যে হাঁসের চর সংলগ্ন দক্ষিণ পশ্চিমাংশে জেগে উঠেছে প্রায় এক হাজার একরের মতো চর। সরকারের গৃহীত কর্মসূচিতে সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মিত হলে ধলঘাটার পশ্চিমে হাঁসের চরের ৩২৫ একর জমি সুপার ডাইকের ভিতরে চলে আসবে। ফলে মহেশখালীর ভূমি বৃদ্ধি পাবে আনুমানিক আরো ১ হাজার ৩২৫ একর।

১৯৯১ সালের মহা প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড়ের ৩৩ বছর অতিবাহিত হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীর জানমাল রক্ষায় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া বলতে গেলে এখনো অরক্ষিত রয়ে গেছে। এখনো নির্মিত হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। দীর্ঘ তিন যুগ পরে হলেও আশার আলো দেখছে উপকূলের জনগণ। মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি, ধলঘাটা ও কুতুবদিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের টেকসই উন্নয়ন ও জনগণের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্যে ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু হয়েছে। অচিরেই এই বৃহৎ প্রকল্পটি অনুমোদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করা হলেও এখন কুতুবদিয়ায়ও নির্মিত হবে সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ। ৭০ নং পোল্ডার বান্দরবান জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে হলেও কাজের সুবিধার্থে এখন কঙবাজার জেলার অধীনে নেওয়া হয়েছে। মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় সুপার ডাইক বেড়িবাঁধের জন্য ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও এখন তা সংশোধন হয়ে আরো বাড়বে।

কর্মকর্তারা আরো জানান, মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় ১৭.৬৩ কিলোমিটার সুপার ডাইকের উচ্চতা হবে ১০ মিটার। এতে ৮.৫ কিলোমিটার হবে নতুন বাঁধ। এই পোল্ডারে খাল খনন হবে ১০.১২ কিলোমিটার। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ৩ একর লেক খনন ও বনায়ন করা হবে। কুতুবদিয়া উপজেলায় ৪০.১৮ কিলোমিটার সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মিত হবে। প্রথম পর্যায়ে বাঁধের উচ্চতা হবে ৮.৫ মিটার। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য পুকুর পুনর্বাসন ও বনায়ন করা হবে। সুপার ডাইকের উপরে হবে আধুনিক সড়ক।

মহেশখালীকুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য ঝুকিপুর্ণ ৮ ইউনিয়নের জনগণকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে কাজ করছে সরকার। এলাকার উন্নয়ন ও মানুষকে শতভাগ সুরক্ষা দেওয়াই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল লক্ষ্য। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া হবে সুরক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ উপজেলা। আশা করি অচিরেই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল চালু হচ্ছে এপ্রিলে
পরবর্তী নিবন্ধবরখাস্ত ডিআইজি মিজানের ১৪ বছরের দণ্ড হাইকোর্টে বহাল