সাগরের তলদেশে পাইপ লাইনে বহুল প্রত্যাশার ক্রুড অয়েল সরবরাহ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাগরের তলদেশে পাইপ লাইনে ক্রুড অয়েল সরবরাহ দেয়া শুরু হয়। তবে নানা প্রক্রিয়া শেষ করে এই তেল ইস্টার্ন রিফাইনারীতে আজ পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। শুরুতে খুবই সামান্য পরিমাণে তেল এবং পিগ দেয়া হলেও পরবর্তীতে পুরোদমে তেল খালাস করা হবে। গত ৬ মার্চ ডিজেল খালাস সম্পন্ন হওয়ার পর গতকাল থেকে ক্রুড অয়েল খালাস শুরু করা হয়। ৮২ হাজার টন ক্রুড অয়েল খালাস করতে আগামী ৪–৫ দিন লাগতে পারে। তবে এই ক্রুড খালাসের ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে গতকাল মহেশখালী থেকে ছাড়া পিগ আজ ঠিকঠাকভাবে ইস্টার্ন রিফাইনারীতে পৌঁছাতে হবে।
সূত্র জানিয়েছে, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ডিজেল এবং ক্রুড অয়েল মাদার ভ্যাসেল থেকে দ্রুত ও সাশ্রয়ী পন্থায় খালাসের জন্য বঙ্গোপসাগরে সাত হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপ লাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। জার্মানির একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপ লাইন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের কোম্পানি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের মহেশখালীর অদূরে গভীর সমুদ্রে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ (এসপিএম) নির্মাণ করা হয়। ওখান থেকে ৩৬ ইঞ্চি ডায়ার দুইটি পাইপ লাইন মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংক পর্যন্ত এবং মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংক থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত ১৮ ইঞ্চি ডায়ার দুইটি পাইপ লাইন স্থাপন করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় অফ শোর এবং অনশোর মিলে মোট ২২০ কিলোমিটার ডাবল পাইপলাইন রয়েছে। এরমধ্যে ১৪৬ কিলোমিটার অফশোর পাইপলাইন এবং ৭৪ কিলোমিটার অনশোর পাইপলাইন। প্রকল্পের আওতায় পাইপ লাইন ছাড়াও মহেশখালীতে ১ লাখ ২৫ হাজার টন ক্রুড অয়েল এবং প্রায় ৮০ হাজার টন ডিজেল সংরক্ষণের ট্যাংক নির্মাণ করা হয়। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল এবং ডিজেল ৩৬ ইঞ্চি ডায়ার পৃথক দুইটি পাইপ লাইনের একটি দিয়ে ডিজেল এবং অপরটি দিয়ে ক্রুড অয়েল ওই দুইটি ট্যাংকে সংরক্ষণ করা হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী ইস্টার্ন রিফাইনারী পর্যন্ত টেনে আনা ১৮ ইঞ্চি ডায়ার দুইটি পাইপ লাইনের একটি দিয়ে ক্রুড অয়েল ইস্টার্ন রিফাইনারীর ট্যাংকে এবং অপর পাইপ লাইন দিয়ে ডিজেল ইস্টার্ন রিফাইনারীস্থ এইচ ট্যাংকের মাধ্যমে পদ্মা অয়েল কোম্পানি, যুমনা অয়েল কোম্পানি এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পতেঙ্গার গুপ্তাখালস্থ প্রধান ডিপোতে পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে আর বহির্নোঙরে অবস্থানকারী মাদার ভ্যাসেল থেকে জ্বালানি তেল লাইটারিং করতে হবে না। এতে বছরে অন্তত আটশ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হবে। এছাড়া একটি মাদার ভ্যাসেল খালাস করতে যেখানে ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতো সেখানে মাত্র ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত নভেম্বর মাসে দুই জাহাজে বোঝাই করে সৌদি আরব থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এরমধ্যে ৮২ হাজার টন ক্রুড অয়েল এবং ৪২ হাজার টন ডিজেল। পাইপ লাইন কমিশনিং করার জন্য এই তেল আমদানি করে খালাস করার ব্যবস্থা করা হয়। ইতোপূর্বে জাহাজ থেকে তেল খালাস করে মহেশখালী ট্যাংকে রাখা হয়। গত ২ মার্চ শুরু করা হয় পাইপ লাইনে ডিজেল আনার প্রক্রিয়া। গত ৬ মার্চ মহেশখালী থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারীতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সব ডিজেল আনা সম্পন্ন হয়েছে।
গতকাল শুরু হয় ক্রুড অয়েল আনার প্রক্রিয়া। সকাল ৮টায় ক্রুডের পাইপ লাইনে ক্রুড পাম্প করা হয়। কিছুক্ষণ পর পাঠানো হয় পিগ। এই পিগ ঠিকঠাকভাবে আজ ইস্টার্ন রিফাইনারীতে পৌঁছানোর পর পুরোদমে ক্রুড অয়েল পাম্প করা হবে। পিগ ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের ক্রুডের পাইপ লাইন পুরোপুরি পরিষ্কার করে ফেলবে। একই সাখে ক্রুড অয়েল প্রবাহে কোন সমস্য হয় কিনা তা দেখার ক্ষেত্রেও এই পিগ গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ৮২ হাজার টন ক্রুড অয়েল মহেশখালী থেকে ১৮ ইঞ্চি ব্যসের পাইপ লাইনে ইস্টার্ন রিফাইনারীর ট্যাংকে পৌঁছবে। ইস্টার্ন রিফাইনারীর একজন কর্মকর্তা গতকাল ক্রুড অয়েল প্রবাহ শুরু হয়েছে বলে স্বীকার করেন।