চট্টগ্রাম বন্দরের আলোচিত কোকেনকাণ্ডের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করেছেন আদালত। আগামী ১৯ নভেম্বর আসামিদের পরীক্ষার জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় এ পরীক্ষা করা হবে। গতকাল চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সিরাজাম মুনিরা এ আদেশ দেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ আজাদীকে বলেন, কোকেনকাণ্ডের মামলায় পৃথক দুটি চার্জশিট হয়। এর মধ্যে মাদক আইনের চার্জশিটে ৩১ জন আর বিশেষ ক্ষমতা আইনের চার্জশিটে থাকা ৩০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড হয়েছে। পর্যাপ্ত সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড হয়েছে মনে করায় বিচারক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করেছেন। আগামী ১৯ নভেম্বর পরবর্তী মামলার তারিখ। সেদিন ৩৪২ ধারায় আসামিদের পরীক্ষা করা হবে।
এদিকে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য রেকর্ড হয়নি দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূইয়া আজাদীকে বলেন, কোকেনকাণ্ডের মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এ মামলার আরো গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী রয়েছে। পর্যাপ্ত সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড হয়েছে আমরা এমনটা মনে করছি না। আমরা এ বিষয়ে পিটিশনও দিয়েছি। কিন্তু আদালত সেটি খারিজ করে দিয়েছে। আমরা আবারও পিটিশন দিব এবং আগামী ধার্য তারিখে এ বিষয়ে শুনানি করব। ২০১৫ সালের ৬ জুন পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোকেন সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের একটি চালান জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
এরপর ২৭ জুন তেলের চালানের ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। বলিভিয়া থেকে আসা চালানটির প্রতিটি ড্রামে ১৮৫ কেজি সূর্যমুখী তেল ছিল। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারসহ চারটি পরীক্ষাগারে তেলের চালানের দুটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। সূত্র জানায়, এ চালান উরুগুয়ের মন্টেভিডিও থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আদালতসূত্র জানায়, কোকেন জব্দের এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। পরবর্তীতে এ দুটি আইনে ১০ জন আসামির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল হয়। এরমধ্যে মাদক আইনে ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল এবং চোরাচালান অর্থাৎ বিশেষ ক্ষমতা আইনে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি বিচার শুরু হয়। ১০ আসামি হচ্ছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল, মালিক মোস্তফা কামাল, গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক একেএম আজাদ রহমান, সিঅ্যান্ডএফ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, খান জাহান আলী লিমিটেডের মালিক নূর মোহাম্মদ, নূর মোহাম্মদের ভাই ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোস্তাক আহমদ খান, আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী আলম এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া।
আদালতসূত্র জানায়, আসামিদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ, তার ভাই মোস্তাক আহমদ খান, আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী আলম এবং দুই যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফজলুর রহমান ও বকুল মিয়া পলাতক। বাকি পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজন জামিনে ও দু’জন হাজতে আছেন।