চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্ববৃহৎ টার্মিনাল নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) বহুল আলোচিত সাইফ পাওয়ার টেক থেকে নিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এনসিটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যাক্টর ট্রেইলরসহ প্রাইম মুভার সরবরাহকারীদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করেছে। বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের সাথে চুক্তির মেয়াদ আগামী ৬ জুলাই শেষ হচ্ছে। ৭ জুলাই থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরাই এই টার্মিনালের অপারেট করবে। তবে এনসিটির ৫টি জেটিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে আরো বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ৪টি কন্টেনার টার্মিনালের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল বা এনসিটি। এই টার্মিনালে ৫টি জেটি রয়েছে। রয়েছে কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট। ২০০৭ সালে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৪৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ এই টার্মিনাল নির্মাণ করে। অবকাঠামোগত নির্মাণ শেষে বিদেশি একাধিক কোম্পানি নিজস্ব বিনিয়োগে ইকুইপমেন্ট স্থাপন করে টার্মিনালটি পরিচালনার আগ্রহ দেখিয়েছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক দরপত্রও আহ্বান করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের চাপের মুখে সেই দরপত্র বাতিল করা হয়। এতে করে পুরোপুরি তৈরি হয়েও চালু করা সম্ভব হয়নি এনসিটি। প্রায় সাত বছর অচল পড়ে থাকা এনসিটিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে অন্ততঃ দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ইকুইপমেন্ট স্থাপন করে। বেশ কয়েক বছর আগে ডিপিএম পদ্ধতিতে এই টার্মিনালের পাঁচটি জেটিতে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেককে। ডিপিএম পদ্ধতিতে সরাসরি নিয়োগ পাওয়া এই প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ বাড়ানো চুক্তির মেয়াদ আগামী ৬ জুলাই শেষ হচ্ছে। এতে করে ৭ জুলাই থেকে এই টার্মিনালে কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে টার্মিনালটির ইকুইপমেন্ট বহরের পরিচালন ব্যয় নির্বাহের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সরকারের অনুমোদন চেয়েছে।
গতকাল বন্দর কর্তৃপক্ষ এনসিটিতে কন্টেনার পরিবহনের জন্য ট্যাক্টর ট্রেইলরসহ প্রাইম মুভার সরবরাহকারীদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করেছে। এটি সাইফ পাওয়ারটেক থেকে এনসিটি নিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বন্দর বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত দরপত্র ক্রয় এবং ৩ জুলাই পর্যন্ত জমা দেয়া যাবে। ওইদিনই টেন্ডার খুলে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে উল্লেখ করে বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ৭ জুলাই থেকে কন্টেনার পরিবহনে যাতে কোন সমস্যা না হয় সে জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রাইম মুভারের এই খরচের যোগান দেবে। প্রাইম মুভার সরবরাহকারীকে এর ড্রাইভার, জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুরই যোগান দিতে হবে বলে দরপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (মেকানিক্যাল) এসএম হাবিবুল্লাহ আজিম দরপত্র আহ্বান করেন।
বিষয়টি নিয়ে বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সাইফ পাওয়ারটেকের কাছে আর এনসিটি থাকছে না–এটি নিশ্চিত। অনেক বছর ধরে তারা এই টার্মিনাল অপারেট করেছে। এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেই টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। প্রাথমিকভাবে ৬ মাসের প্রস্তুতি নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাজ শুরু করবে। পরবর্তীতে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমেই অপারেটর নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হতে পারে বলেও সূত্র আভাস দিয়েছে।