মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই জল উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বৈসাবি উৎসব। নানা উৎসাহ আর উদ্দীপনায় পাহাড়ে শেষ হলো প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’। অরণ্যের শহর রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ে বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণের এ উৎসব আদিবাসীদের প্রাণের উৎসব।
আজ শনিবার (১৬ এপ্রিল) মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই জল উৎসবের মাধ্যমে শেষ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি। পুরাতন বছরের সকল গ্লানি মুছে ফেলে নতুন বছরের শুভ কামনার জন্য বৃহত্তম এ আয়োজন করা হয় প্রতি বছর।
পার্বত্য জনপদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির নিজ নিজ ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে প্রতি বছরের মতো মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থা (মাসাস) আয়োজন করে এ মনোরম অনুষ্ঠানের।
আজ শনিবার এ উৎসব উপলক্ষে মারমা মাসাস-এর উদ্যোগে দুপুর ১২টায় রাঙামাটির কাউখালীর বেতবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী জল উৎসব।
মাসাস) কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাংগ্রাই জল উৎসবের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।
মাসাস সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংস্ইু প্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজিবি’র সদর সেক্টর কমান্ডার উপ-মহাপরিচালক কর্নেল মো. তরিকুল ইসলাম, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মীর মোদাছছের হোসেন, রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল বিএম আশিকুর রহমান, আর্মি সিকিউরিটি ইউনিট রাঙামাটি শাখার ডেট কমান্ডার লে. কর্নেল মেছবাহুল আলম সেলিম (পিএসসি) প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য দেন মাসাস সাধারণ সম্পাদক মউসিং মারমা।
আলোচনা সভা শেষে ঐতিহ্যবাহী মং (ঘণ্টা) বাজিয়ে ও ফিতা কেটে জল উৎসবের উদ্বোধন করেন দীপংকর তালুকদার।
এরপর মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে একে অপরকে জল ছিটিয়ে জল উৎসবে মেতে উঠে। পাশাপাশি চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংগ্রাই উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পানি খেলা দেখার জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর উৎসবস্থলে সমবেত হয়। এ উৎসব দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন। সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে এ উৎসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও বাঙালির মিলনমেলায় পরিণত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দীপংকর তালুকদার বলেন, “পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাই জল উৎসব উদযাপন করে থাকেন। এ উৎসবটি সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেই সঙ্গে কিছুটা ধর্মীয় অনুভূতিও এর সঙ্গে মিশে রয়েছে।”
এদিকে, উৎসবে হাজার হাজার আদিবাসী নর-নারী ছাড়াও কয়েক হাজার বাঙালি নর-নারী উপস্থিত থেকে এ উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। পাহাড়ি বাঙালির পদধুলিতে এক মহামিলন মেলায় পরিণত হয় মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব।
একদিকে বিশালাকার মঞ্চে চলে মারমা শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর গান আর নাচ আর অন্যদিকে তখন চলছিল মারমা তরুণ-তরুণীদের জল উৎসব। ভালোবাসা আর স্নিগ্ধতার জলে একে অপরকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল মারমা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা তরুণ-তরুণীরা।
পরম স্নিগ্ধতায়, ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় ভিজিয়ে দেয় তারা পরস্পরকে। একে অপরের প্রতি পানি ছিটানোর মাধ্যমে নিজের মধ্যে যে ভালোবাসার এক অজানা অনুভূতি লুকিয়ে ছিল তা প্রকাশ করেছে প্রতিটি মারমা তরুণ-তরুণী।
জল উৎসব খেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে শুধু মারমারাই নয়, ছুটে আসে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের হাজারো মানুষ।