চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তুমুল সমালোচনা করেছেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। গত ২০ জুন বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টায় সংগঠনের বর্ধিত সভায় তিনি এ সমালোচনা করেন। পরে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন এই সমালোচনার পাল্টা জবাব দিয়েছেন। ওইদিন বিকেল ৪ টায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দুই শীর্ষ নেতা একে অপরের বক্তব্যে ক্ষোভ– পাল্টা ক্ষোভ ঝাড়েন এবং বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা দুই নেতার বক্তব্যে পক্ষে–বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে হাততালি দেন। এসময় পুরো সভা উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
বর্ধিত সভায় উপস্থিত নগর আওয়ামী লীগের দুই নেতা আজাদীকে বলেন, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বক্তব্য দিতে উঠে নগর কমিটির যথাযথ দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বর্ধিত সভার (গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত) ব্যাপারে তাকে অবহিত করা হয়নি; তিনি বিভিন্নজনের কাছ থেকে শুনে বর্ধিত সভায় এসেছেন বলে উল্লেখ করেন। এরপর তিনি ইউনিট ও ওয়ার্ড কমিটি সম্মেলনে অনিয়ম এবং সদস্য সংগ্রহসহ নানান বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় মেয়রের বক্তব্যে উপস্থিত নেতাকর্মীদের অনেকেই হাততালি দিয়ে সম্মতি জানান। সভায় উপস্থিত অনেক ইউনিটের নেতাদেরকেও বর্ধিত সভার ব্যাপারে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন এসব কথা খণ্ডন করে বক্তব্য দেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভার শুরুতেই সূচনা বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এরপর বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ। নোমান আল মাহমুদের পর বক্তব্য রাখতে উঠেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
প্রকৃত আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর ইউনিট ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এভাবে আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ –ত্যাগী দল চলতে পারে না। নগরীর যে সব ইউনিট ওয়ার্ড কমিটি করা হয়েছে তাতে সমাজের চরিত্রহীন মানুষজনকে এনে পদ পদবী দেয়া হয়েছে। বিএনপি জামায়াতের লোকজনকে এনে দলে ঢুকানো হয়েছে। প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা কমিটিতে স্থান পায়নি। কোনো কোনো ওয়ার্ডের সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ৫ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে; আমার কাছে প্রমাণ আছে। চাইলে দেখাতে পারবো। এখন দলের সুসময়ে অনেকেই আসছেন, ’৭৫– এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তো আমরা দলের জন্য কাউকে খুঁজে পাইনি।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আরো বলেন, দলকে কিভাবে সংগঠিত করা হবে জানি না; আজকে যে বর্ধিত সভা (গত বৃহস্পতিবার) তা আমি জানি না। আমাকে জানানো হয়নি। আমার মতো অনেকেই আজকের সভার ব্যাপারে জানেন না; এসময় তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও বন্দর–পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে আজকের সভার বিষয়ে জানেন কিনা উপস্থিত সভায় সকলের সামনে জিজ্ঞেস করলে তিনি আজকের সভার বিষয়ে তাকে জানানো হয়নি বলে জানান।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ৭০ লাখ মানুষের মধ্যে (চট্টগ্রাম মহানগরীতে) ১০ লাখ মানুষ আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়ার কথা ছিল; এখানে হয়েছে মাত্র ২০ হাজার ৫০০ জন।
এসময় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী জিজ্ঞেস করেন সংগঠনের কোন জায়গায় আছে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সাড়ে ৪শ’ সদস্য করতে হবে? অনেক ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পায়নি। থানা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য আরো সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হবে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। সম্মেলনের নামে টাকার ছড়াছড়ি কাম্য নয়। যেভাবে সংগঠন চলছে, সেভাবে চললে হবে না। হালুয়া–রুটির জন্য সংগঠন করবে, তা হবে না।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আরো বলেন, এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আমরা ভোট পাচ্ছি ৮ শতাংশ। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না– তখন ভোট পেয়েছি ৪২ শতাংশ। যারা পদ পদবীতে আছেন তারাই তো ভোট দিতে আসেন না।
তিনি বলেন, সৎ, সাহসী পরীক্ষিত ও ত্যাগী যে সকল আওয়ামী লীগ কর্মী, যাদের সমাজে গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাদেরকে তৃণমূল স্তরে নেতৃত্বে আনতে হবে। কেননা তারাই সংগঠনের মূল প্রাণশক্তি। এই প্রাণশক্তির যথার্থ মূল্যায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভিত্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে নানা অভিযোগের জবাব দিতে উঠে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন থেকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি; অনেক সভা আহ্বান করেছি–আপনি কয়টা সভায় এসেছেন? সংগঠন সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। গঠনতন্ত্র মেনে সবকিছু হচ্ছে।’