সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্বস্ত পরিবেশ গড়ে তোলা দরকার

মানসিক স্বাস্থ্য

| শুক্রবার , ১০ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। সারাবিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই দিবস পালন করা হয়।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় যে পরিমাণ মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ রয়েছেন তা অপ্রতুল। কাজেই এ ক্ষেত্রে জরুরি হচ্ছে পরিবার, সমাজ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বন্ধুমহলেও এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা। কারণ মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার আগে একজন মানুষকে কিছু ধাপ পার হতে হয়। যদি প্রাথমিকভাবে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান থেকেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তাহলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সে ক্ষেত্রে উত্তম উপায় হতে পারে প্রতিদিনের আলোচনা। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কারণ মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকাদের আচরণ একটু ভিন্ন হয়। অনেক সময় ব্যক্তি নিজেই বুঝতে পারেন না যে তিনি ঝুঁকিতে আছেন। তাই ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীদের কথা শিক্ষকেরা এবং কর্মীদের কথা দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সহমর্মিতার সঙ্গে শুনবেন, তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না। সর্বক্ষেত্রে যদি এই চর্চাটা শুরু করা যায় তাহলে আলোচনার মাধ্যমে সহজেই মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব।’

তাঁরা বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সাধারণ লক্ষণগুলি হলদুঃখিত মনে হওয়া, শক্তির অভাব, চিন্তায় বিভ্রান্তি, মনোনিবেশ করতে অক্ষমতা, কাজে দেরীতে আসা, অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং ভয়, চরম মেজাজ পরিবর্তন, রাগ, আক্রমণাত্মক আচরণ এবং বিরক্তি দেখানো। পূর্বের তথ্যানুসারে প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১জন কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং যুক্তরাজ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতায় ১৭.১ মিলিয়ন দিন নষ্ট হয়। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য কর্মক্ষেত্রের কর্মক্ষমতার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে যা কর্মীদের উৎপাদনশীলতা, অনুপস্থিতি, উপস্থিতি, কর্মীদের টার্ন ওভার, নিয়োগ কর্তার খ্যাতি এবং কর্মক্ষেত্রের কর্মীর মনোবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কর্মক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠানের নেতাদের একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠানো উচিত যে তারা কর্মীদের সক্রিয়ভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করবেন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। মানসিক স্বাস্থ্য অবস্থার কোন বন্ধ সুইচ নাই। সুতরাং কেউ যখন দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজে যোগ দেয় তখন মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ছাড়া তার পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। মানসিক স্বাস্থ্যের চ্যালেঞ্জগুলি আলোচনা করে মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করার জন্য একটি উন্মুক্ত ও বিশ্বস্ত পরিবেশ গড়ে তোলা দরকার।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, অর্থাৎ সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলজিস্টউভয়ের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। বর্তমানে মাত্র ৩৫০ জন সাইকিয়াট্রিস্ট আর ৫০০এর মতো সাইকোলজিস্ট ১৭ কোটি মানুষের মানসিক সেবা দিচ্ছেন, যা খুবই কম। যেখানে মানসিক রোগের হার প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ আর শিশুকিশোরদের মধ্যে ১৩ শতাংশ। আবার এই বিশেষজ্ঞদের বেশির ভাগই অবস্থান করেন বড় শহরগুলোয়। তাঁদের কাছে পৌঁছানোই একটি সীমাবদ্ধতা। এছাড়া, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, মেডিকেল কলেজ ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ছাড়া সরকারি পর্যায়ে উপজেলা কিংবা জেলাগুলোয় নেই কোনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো। ফলে প্রান্তিক মানুষের কাছে এই সেবা দূরগম্য। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে কাউন্সেলিং সেবা, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

আইনবিদদের মতে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘মানসিক স্বাস্থ্য সিস্টেম মূল্যায়ন সমীক্ষায়’ দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে পর্যালোচনা করার জন্য কোনো মানবাধিকার পর্যালোচনা কমিটি নেই। সমতা ও বৈষম্যহীনতার নীতিমালা বজায় রাখার জন্য, আইনে একটি স্পষ্ট বিধান থাকা উচিত যে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসার সময় শারীরিকভাবে অসুস্থ রোগীদের মতোই একই মানের যত্ন পাওয়ার অধিকার রাখবেন, যার মধ্যে জরুরি সেবা, অ্যাম্বুলেন্স সেবা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তাছাড়া, রোগী বা তার অভিভাবকের চিকিৎসার সব দিক সম্পর্কে জানার অধিকার থাকা উচিত, যার মধ্যে চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্যও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি দেশের সকল জেলায় গৃহীত হলে, আইনের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে। এই সমস্ত উদ্বেগগুলি যদি সন্তোষজনকভাবে সমাধান করা হয়, তবেই বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় থাকা ব্যক্তিদের অধিকার যথাযথভাবে সংরক্ষিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে