নৌ পরিবহন উপদেষ্টার অসন্তোষ প্রকাশের পর চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে থাকা গাড়ি সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ইয়ার্ডের জায়গা দখল করে থাকা ২৯৭টি গাড়ি ছিল বন্দরের ‘গলার কাঁটা’। গাড়িগুলো গতকাল দুপুর থেকে সরানো শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বন্দর পরিদর্শনে আসেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। ইয়ার্ডের ভেতর থেকে সকল গাড়ি ও নিলামযোগ্য পণ্য না সরানোয় কাস্টমসের কর্মকর্তাদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। প্রায় তিন মাস আগে এসব গাড়ি ও পণ্য সরিয়ে ইয়ার্ড খালি করার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা ঝুলে থাকায় তিনি ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি নিলামযোগ্য গাড়ি ও স্ক্র্যাপ সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেন। উপদেষ্টার এই প্রতিক্রিয়ার পর ২০ বছরের ‘জঞ্জাল’ থেকে নিস্তার পাচ্ছে বন্দর। গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩০টির মতো গাড়ি ক্রেন দিয়ে সরিয়ে কাস্টমসের নিলাম শেডে স্থানান্তর করা হয়েছে। চলাচলের অনুপযোগী এসব গাড়ি স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে ডাম্পিং ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে আটকা পড়ে রয়েছে ২৯৭টি গাড়ি। এসব গাড়ির মধ্যে ২০০২ সালে আমদানিকৃত গাড়িও রয়েছে। শুল্কায়ন জটিলতা এবং মামলার কারণে গাড়িগুলো ডাম্পিং ইয়ার্ডে আটকা পড়েছিল। বছরের পর বছর ধরে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে পড়ে থাকা গাড়িগুলো মামলা জটিলতায় সরানো যাচ্ছিল না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত প্রাইভটেকার, মাইক্রোবাস, জিপ ও পিকআপগুলোকে কেন্দ্র করে আদালতে কয়েকশ মামলা রয়েছে বলে কাস্টমস সূত্র জানায়। এসব মামলার কারণে আমদানিকারক গাড়ি ছাড় করাতে পারেননি। আবার মামলা চলমান থাকায় কাস্টমসও গাড়িগুলো নিলামে তুলতে পারেনি। কাস্টমস এবং আমদানিকারকের মাঝে সৃষ্ট জটিলতার খেসারত দিচ্ছিল বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২০ বছর ধরে অসংখ্যবার চিঠি দিলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গাড়িগুলো সরানোর উদ্যোগ নিতে পারেনি। এতে বন্দর জায়গা দখলের পাশাপাশি নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছিল।
চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে গাড়ি আমদানি অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। এখন যেসব গাড়ি আসে সেগুলো বন্দরের ইয়ার্ডের বাইরে কারশেড এবং ইয়ার্ডের ভেতরে কারশেডে রাখা হয়। ডাম্পিং ইয়ার্ডে এখন কোনো গাড়ি রাখা হয় না। ২০ বছর আগেকার গাড়িসহ পরবর্তীতে আমদানিকৃত আটকা পড়া গাড়িগুলোর দখলে চলে গিয়েছিল পুরো ডাম্পিং ইয়ার্ড।
তিন মাস আগে এসব গাড়ি সরানোর উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর না হওয়ায় গতকাল নৌ উপদেষ্টা বন্দর পরিদর্শনকালে ডাম্পিং ইয়ার্ডে গাড়িগুলো দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি গাড়িগুলোকে দ্রুত সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা প্রদান করেন। উপদেষ্টার নির্দেশনার ঘণ্টা দুয়েকের মাথায় শুরু হয় ইয়ার্ড থেকে গাড়ি সরানোর কাজ। বিশালাকৃতির ক্রেন দিয়ে ইয়ার্ড থেকে গাড়িগুলো সরিয়ে কাস্টমসের নিলাম শাখায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ৩০টি গাড়ি সরানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, ডাম্পিং ইয়ার্ডের জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে আটকা পড়া গাড়ির দখলে রয়েছে। বন্দরের অভ্যন্তরে অনেক জায়গার দরকার। এসব জায়গায় ইয়ার্ড নির্মাণ করা হলে বন্দরের কন্টেনার মুভমেন্ট বৃদ্ধি পাবে। কাজে গতি আসবে। ডাম্পিং ইয়ার্ডকে জঞ্জালমুক্ত করে অচিরে সেখানে কন্টেনার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে।
এদিকে নৌ উপদেষ্টা আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শেডে থাকা গাড়ি এবং ২৮ ফেব্রয়ারির মধ্যে স্ক্র্যাপগুলো নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, কাস্টমস আইন অনুযায়ী আমদানিকৃত গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার ৩০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি না নিলে সেগুলো নিলামে বিক্রির বিধান রয়েছে।