করোনা সতর্কতায় দীর্ঘ ৫ মাস বন্ধ থাকার পর আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে ‘সীমিত’ পরিসরে চালু হওয়া কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এখন পর্যটকে টইটুম্বর। পর্যটন কেন্দ্রগুলো সরগরম। সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং নানা দিবসের বন্ধে কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে বসছে লাখো মানুষের মিলনমেলা। তবে গত ৩ মাস আগে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ খুলে দেওয়ার পর এবারের সাপ্তাহিক ছুটিতেই এসেছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক। সারাদেশে শীতের আমেজ শুরু হওয়ার পাশপাশি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জলপথে জাহাজ চলাচল চালু হওয়ায় পর্যটক বৃদ্ধির এ কারণ বলে মনে করেন কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের (টোয়াক বাংলাদেশ) সভাপতি তোফায়েল আহমদ।
তিনি বলেন, করোনা সতর্কতায় ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ১৭ আগস্ট থেকে ‘সীমিত’ পরিসরে ও ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ খুলে দেওয়া হলেও মূলত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জলপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়ার পর থেকেই এখানকার পর্যটন শিল্প জমে ওঠেছে।
গতকাল শুক্রবার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জলপথে একটি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। আজ শনিবার থেকে চালু হবে আরেকটি জাহাজ। এছাড়া গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকেও চলাচল করছে জাহাজ। বর্তমানে এ ৩টি জাহাজে প্রায় ২ হাজার যাত্রী ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। তবে এসব জাহাজের বাইরে ছোট ছোট ইঞ্জিন নৌকায় করে আরো কয়েক হাজার পর্যটক প্রতিদিন টেকনাফের বিভিন্ন ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াত করছে। হোটেল মালিকদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশ, কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকা মানুষ এখন যেন মুক্ত হাওয়ার সন্ধানে, বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে কক্সবাজার সাগরপাড়ের দিকে ছুটছে। বিশেষ করে গত এক মাস ধরে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লাখো পর্যটক ভীড় করছে কক্সবাজারে।
তিনি জানান, কক্সবাজার শহর ও শহরতলীসহ জেলার সাত শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে দেড় লক্ষাধিক পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। গত এক মাস ধরে ছুটির দিনে কক্সবাজারের হোটেলগুলোর প্রায় ৮০% ভাগ কক্ষ ভাড়া হয়ে যাচ্ছে। আর গত ২দিন ধরে প্রায় শতভাগ কক্ষ ভাড়া হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। করোনার প্রথম ধাক্কার পর দীর্ঘ ৫ মাসের অধিক সময় কক্সবাজারে সব কিছু বন্ধ ছিল। অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা চিন্তা করে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ‘পরীক্ষামূলক খুলে দেয়া’ হয়েছে। সামনে ভর পর্যটন মৌসুম। আবার করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার শংকার কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা রোধের পাশাপাশি পর্যটনটাও এগিয়ে নিতে হবে।
তবে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভীড় বাড়ার পাশপাশি দুর্ভোগ বাড়ছে শহরবাসীর। হঠাৎ করে পর্যটকদের অত্যধিক চাপ তৈরি হওয়ায় স্থানীয়রা যানবাহন সংকটে পড়ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। শহরের টেকপাড়ার অধিবাসী মাঈনুদ্দিন হাসান সাহেদ বলেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আমি স্টেশনে আধঘণ্টার বেশি দাঁড়িয়েও গাড়ি পাইনি। পরে হেঁটেই কর্মস্থলে গমন করেছি। একই অভিযোগ করেন শহরের রুমালিয়ারছড়ার বাসিন্দা কামাল হোসেন চৌধুরী ও আলীর জাঁহাল এলাকার বাসিন্দা আবদুল করিম সওদাগর।