সরকার বাড়তি মূল্যে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম নির্ধারণ করে দেয়ায় সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে উল্টো ব্যবসায়ীদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার সাথে দাম বাড়িয়ে দেন। অথচ প্রায়শঃ দেখা যায়- বাড়তি দামে আমদানি হয়নি এসব তেল। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর যেখানে অভিযান চালানোর কথা, সেখানে তাদের সেই ভূমিকা দেখা যায় না। এটি শুধু তেলের বাজার নয়; সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
জানা গেছে, গত দেড় মাস আগে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা থেকে ১০৫ টাকায়। কিন্তু সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলের বাজার অস্থিতিশীল থাকার কথা বলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের ন্যূনতম মূল্য ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল রাজধানীর সচিবালয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের মূল্যের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি লিটার সয়াবিন (খোলা) মিল গেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন মিলগেট মূল্য ১২৩ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা। পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিলগেট মূল্য ৫৮৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৬০০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৬২৫ টাকা। আমাদের দেশে যে তেল ব্যবহার করি তার ৭০ শতাংশ পাম সুপার, যার প্রতি লিটার মিলগেট মূল্য (খোলা) ৯৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৯৮ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১০৪ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে ভোক্তারা বলছেন, বাড়তি দামে ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয়ায় বাজার আরো অস্থির হতে পারে। কারণ ব্যবসায়ীরা প্রায় সময় বিভিন্ন সংকট দেখিয়ে বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করেন। সামনে রমজানকে কেন্দ্র করে সেটি হতে পারে। কারণ সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও মনিটরিংয়ের দুর্বলতায় ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামের বেশি মূল্য নিতে পারেন। তাই বাজারে নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোটাই ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ব্যবসায়ীরা কখনো পেঁয়াজ, কখনো চাল-ডাল, আবার কখনো চিনি নিয়ে চিনিমিনি খেলে। আন্তর্জাতিক বাজারে ২ ডলার দাম বাড়লেও তারা দ্বিগুণ দাম বাড়িয়ে দেন। আমরা বারবার প্রশাসনকে বাজার মনিটরিংয়ের কথা বলে আসছি। দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র রমজান এলেই বাজার মনিটরিং জোরদার হয়। আমরা আশঙ্কা করছি, সরকার এখন ভোজ্য তেলের দাম দিলেও ব্যবসায়ীরা সেই দাম থেকে বাড়তি দামে বিক্রি করবেন। বিষয়টি তাই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।