চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেছেন, জেলার সার্বিক উন্নয়নে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সরকারি প্রত্যেক দপ্তরকে সংস্কারের আওতায় এনে মেধা, দক্ষতা ও সততা দিয়ে কার্যক্রম চালাতে হবে। গতকাল রোববার নগরীর সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিসি বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে যাদেরকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদেরকে পরিষদের কার্যক্রমগুলো সুচারুভাবে পালন করতে হবে। জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে ক্রীড়া সংস্থা ও বন্যা পুনর্বাসন কমিটি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালিকা জমা দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।
আনোয়ারা–বাঁশখালী প্রান্তে তৈলারদ্বীপ সেতু প্রসঙ্গে সওজের দক্ষিণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ছাত্র–জনতার আন্দোলনের কারণে তৈলারদ্বীপ সেতু দিয়ে গাড়ি পারাপারে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে। এ সেতু থেকে সরকার বছরে ১০ থেকে ১১ কোটি টাকা রাজস্ব পেত। এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এ সেতুতে এক সময় টোল নেওয়া হতো। সরকারের রাজস্ব বাড়াতে গিয়ে দেশের যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি দেখা জরুরি। এজন্য ছাত্র সমন্বয়কদের সাথে উপজেলা প্রশাসন আলোচনা করবে এবং তৈলারদ্বীপ সেতুতে টোল আদায়ের বিষয়ে সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের কাছে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চাওয়া হবে। জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম বলেন, জেলা পরিষদের সকল কার্যক্রম সুন্দরভাবে চলছে। কোনো প্রকল্পে যাতে অনিয়ম না হয় সে বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদারকি অব্যাহত রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, সার্বিক আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশ নতুনভাবে কাজ শুরু করেছে। সকলের সহযোগিতা পেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতায় সর্বত্র লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গুর হটস্পট ভাগ করে রেড ও ইয়েলো জোন চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রামে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৮১ জন, মৃত্যুবরণ করেছে ৭ জন। আগস্ট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২ জন, মৃত্যুবরণ করেছে ২ জন। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই।
সভায় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক মোহাম্মদ তাজবিল্লাহ বলেন, কোনো ধরনের ভোগান্তি ও হয়রানি ছাড়াই গ্রাহকেরা পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে। কোনো রোহিঙ্গা নাগরিক যাতে এখানে এসে ভোটার হতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি।
পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, জেলার ১৫ উপজেলা ও নগরীর পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তা–কর্মচারীরা তাদের কর্মস্থলে আগমন ও দায়িত্ব থেকে প্রস্থানের বিষয়টি মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে নিয়মিত তদারকি করা হয়।
সভায় জেলা খাদ্য অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, পরিসংখ্যান অফিস, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, রাবার বিভাগ, বন বিভাগ, সওজ, এলজিইডি ও জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাদি–উর রহিম জাদিদের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লোহাগাড়া, কর্ণফুলী, বাঁশখালী ও রাউজানের ইউএনও, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অয়ন কুমার ত্রিপুরা, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ফখরুল আলম, উত্তর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চার, দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল–মামুন, উপকূলীয় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, বীজ পিনন ও সিডিসির উপপরিচালক মোহাম্মদ নাইমুম আরিফ, নিরাপদ খাদ্য অফিসার মুহাম্মদ মুনতাসির মাহমুদ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক।