চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরামর্শক কমিটির প্রথম সভায় প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস থেকে সরকার যে পরিমাণ ট্যাঙ নিয়ে যায়, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ নগরের উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, নগরের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন সত্যিকার অর্থে নানা আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থাকায় চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে উন্নীত করার মতো দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। নগরের বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশের বরাদ্দ নিশ্চিত করা গেলে নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। একইসাথে নাগরিক সুযোগ–সুবিধা এবং বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস থেকে সরকার যে ট্যাঙ নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলেও সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হবে এবং নগরের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীল হতে হবে না। এসময় তিনি জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয় বলেও স্মরণ করিয়ে দেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও নৌ–বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন কমডোর জোবায়ের আহমেদ চসিক প্রশাসকের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্বৃত্ত অংশ দেশের বিভিন্ন কাজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের হিস্যা আদায় করার জন্য একটি তহবিল গঠনেরও পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনকে মাত্র এক শতাংশ দিলেও চট্টগ্রামের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব। চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
বন্দর, কাস্টমস ও অন্যান্য সেবা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা গেলে উন্নয়ন তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বর্তমানে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সমন্বয়হীনতার কারণে অনেকটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুষ্ঠু ও নগর ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। নাগরিকদের সেবার মান বৃদ্ধি করার জন্য অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোকে আরো তৎপর হতে হবে। এদের সমন্বয় করা গেলে আরো বেশি সেবা নাগরিকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। আমরা যদি আমাদের নগরীর সেবায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে সঠিক সমন্বয় করতে পারি, তাহলে আমাদের অনেক সমস্যাই সমাধান করতে সক্ষম হতে পারি। দেখা গেছে, অনেক রাস্তার সংস্কার মাত্র শেষ হয়েছে, সেই রাস্তা করতে অনেক ব্যয়ও হয়েছে, উন্নয়ন কাজের সময় নাগরিকদের অনেক দুর্ভোগও পোহাতে হয়েছে। কাজ শেষ হবার সময় দেখা গেলো কোনো সংস্থা রাস্তা কাটার অনুমতি চাইছে, অনুমতি দিতেও বাধ্য হতে হয়। যে কারণে একটি রাস্তা বার বার খোঁড়াখুঁড়ি হয়, হচ্ছে। যদি সমন্বয় থাকত তাহলে কাজগুলো এক সঙ্গে করা যেতো। এরপর ৫–১০ বছরের ভেতরে আর কাটতে হতো না।
চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন অন্যত্র দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ সড়কই বিধ্বস্ত রূপ নেওয়ার প্রধান কারণ হলো– নগরে যেসব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সেবা সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়ের অভাব। দেখা গেছে ওয়াসা, কেজিডিসিএল, সিডিএ, বিটিসিএলসহ অন্যান্য সেবাসংস্থাগুলো তাদের প্রকল্প কখন শুরু করবে এবং কখন শেষ করবে সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা নেই। এমনও দেখা গেছে যে, নির্ধারিত স্থানে একটি প্রকল্পের কাজ চলাকালীন একই স্থানে আরেকটি পৃথক প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। তাদের এ অপরিকল্পিত কর্মপন্থা কখনো সিটি করপোরেশনের বোধগম্য হয়ে ওঠেনি। একটি সড়কের সংস্কার বা মেরামতি কাজ শেষ করার পর পরই ওয়াসাসহ অন্য সেবা সংস্থাগুলো রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। এ কারণে আর্থিক অপচয়ের পাশাপাশি জনদুর্ভোগও সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য দোষারোপ করা হচ্ছে সিটি করপোরেশনকে।
এসব বিষয় ছাড়াও সিটি করপোরেশন আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় নিমজ্জিত আছে। তার উত্তরণের জন্য অন্যান্য সংস্থাকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওনাগুলো যাতে আদায় হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সুনির্দিষ্ট বিধি–বিধান তৈরি করে দিতে হবে।