সরকার অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করার পরেও খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। ফলে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ ছাড়া বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড় ভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, বালু উত্তোলনের জন্য ইজারাকৃত নির্ধারিত স্থান থাকার পরও অবৈধভাবে মাইনির বুকে মেশিন বসিয়ে বালু তুলছেন ইজারাদাররা। তাদের দাবি, সরকারিভাবে ঘর নির্মাণের জন্য এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও অবগত আছেন বলে দাবি তাদের। কিন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, এসব বালু সরকারি কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও বিক্রি করা হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, সরকারি কাজের দোহাই দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই।
দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিমি দূরের ভাঙন প্রবণ এলাকা বড়াদাম। নীরব নিভৃত এ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মাইনী নদী। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে বড়াদাম বাজার ও বিদ্যালয়। বড়াদাম এলাকাকে জেলা প্রশাসন থেকে বালু মহাল ঘোষণা করা হয়নি। এরপরও মেশিন বসিয়ে বালু তুলে রীতিমত পাহাড় বানিয়ে ফেলেছেন বালু উত্তোলনকারীরা। পরিবেশ আন্দোলন কর্মীরা জানান, কোন এলাকায় বালু উত্তোলন করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা জরিপ করে। নদী থেকে বালু উত্তোলনের আগে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ বাধ্যতামূলক। কারণ যত্রতত্র বালু উত্তোলন করলে পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
বালুবাহী গাড়ির চালক হুসেন বলেন, আমাদের বালু নিয়ে যেতে বলেছে আমরা নিয়ে যাচ্ছি। প্রতি গাড়ি বালু পরিবহন বাবদ ভাড়া পাই। বালুর ইজারাদারের নির্দেশে বালু পরিবহন করছেন বলে জানান তিনি। বালু পরিবহনের তদারকিতে থাকা নবী হোসেন জানান, এসব বালু সরকারি কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসময় প্রতিবেদক নবী হোসেনের হাতে থাকা বালু পরিবহনের রশিদ বই দেখে জানতে পারেন বিভিন্ন জায়গায় তারা বালু বিক্রি করছেন। প্রতি গাড়ির বালুর দাম ধরা হয়েছে ১ হাজার টাকা। সরকারি কাজের পাশাপাশি এসব বালু স্থানীয়ভাবেও বিক্রি হচ্ছে।
এসব বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত নুর হোসেন জানান, এখানকার উত্তোলনকৃত বালু নামমাত্র মূল্যে সরকারি কাজে দেয়া হচ্ছে। সাধারণত প্রতি গাড়ি বালু ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কিন্ত সরকারি কাজের জন্য আমরা ৫শ টাকারও কম রাখছি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও জানেন। তবে তিনি স্থানীয়ভাবে বালু বিক্রি করার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং এই বিষয়ে প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, ‘বড়াদাম এলাকা সংলগ্ন মাইনি নদী থেকে বালু তুললে তেমন পরিবেশগত প্রভাব পড়বে না। নদীতে প্রচুর পরিমাণ বালু জমা হয়েছে। বিপর্যস্ত হওয়ার মতো অবস্থা হয়নি। আমরা টাকা দিয়ে বালু কিনছি।’ খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ‘সরকারি কাজের অজুহাত দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি দেখছি।’